পশ্চিমবঙ্গ জীব বৈচিত্র পরিষদ বহু আগের থেকেই গাছকে জীব বৈচিত্রের অন্যতম উপাদান বলে আসছেন। সম্প্রতি যশোর রোড সম্প্রসারণ করতে গিয়ে ১০০/২০০ বছরের প্রাচীন গাছ কেটে ফেলার প্রস্তাব নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে। সেই নিয়েই পশ্চিমবঙ্গ জীব বৈচিত্র পরিষদ এক আলোচনা সভায় প্রাচীন গাছ সংরক্ষণের উপর জোর দেয়। পরিষদের প্রধান বলেন,দক্ষিণ কলকাতার কয়েকটি অঞ্চলের ঘন সবুজ অংশগুলিকে জীববৈচিত্রের ‘হটস্পট’ হিসাবে চিহ্নিত করে তাদের সংরক্ষণ করা যায় কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি যা বললেন তার মর্মার্থ, মহানগরেই হোক কি গ্রামে-মফস্সলে, এ রাজ্যের যেখানেই দু’শো বছর বা তারও বেশি প্রাচীন বৃক্ষেরা ডালপালা মেলে দাঁড়িয়ে আছে, তাদের প্রত্যেককে চিহ্নিত করে সংরক্ষণ করা দরকার ‘ঐতিহ্য’ হিসাবে।
তিনি বলেন, রাজ্যের মোট ৩৪২টি ব্লকের প্রতিটিতে এ ভাবে যদি একটি করেও মহাবৃক্ষকে চিহ্নিত ও সংরক্ষণ করা যায়, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে উঠবে তিনশোরও বেশি প্রাচীন বৃক্ষ-ঐতিহ্যের আশ্রয়ভূমি এক রাজ্য। বৃক্ষ এমনিতেই মূল্যবান, এই প্রাচীন মহাবৃক্ষেরা আরও মূল্যবান— কারণ তাদের ঘিরে গড়ে ওঠে জীববৈচিত্রের এক-একটি বিরাট বিপুল পরিসর, পাখি প্রজাপতি পিঁপড়ে কীট পতঙ্গ কেঁচো কাঠবেড়ালি-সহ অগণিত প্রাণ নিয়ে। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট উঠে আসে,জলবায়ু পরিবর্তনের ফাঁস যতই চেপে বসছে পৃথিবীর উপরে, উন্নত বিশ্বের শহরগুলিতে নগর-পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশবিদরা ততই জোর দিচ্ছেন শহরের প্রাচীন গাছেদের উপস্থিতি ও অস্তিত্ব নিশ্চিত করার কাজে, তাদের সংরক্ষণ ও প্রযত্নের উপরে— কারণ শহর শুধুই মানুষের বাসস্থান নয়, হতে পারে না কখনও। উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৈচিত্রময় সহাবস্থান ছাড়া মানুষের ‘নাগরিক’ জীবন অসম্পূর্ণ এবং ক্ষতিকর। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, সভ্যতার বিকাশের মূল শর্ত হোক,গাছ রেখে সভ্যতার বিকাশ গাছ রেখে নগরায়ন ও শিল্পায়ন।