অম্বুবাচী। বিশ্বাস, এই সময় ঋতুমতী হন মাতা বসুন্ধরা। সেই উপলক্ষ্যে নানা নিয়ম পালন করা হয় দেশ জুড়ে। ঋতুমতী হলে মেয়েদের সন্তানধারণের ক্ষমতা জন্মায়। তেমনই এই অম্বুবাচীর পরই পৃথিবী শস্যশ্যামলা হয়ে ওঠে বসুন্ধরা। আষাঢ় মাসে মৃগশিরা নক্ষত্রের তৃতীয় পদ শেষ হলে মাসের চতুর্থ পদে পড়লেই শুরু হয় অম্বুবাচী। তিনদিন চলে সেই পর্যায়। এই সময় মাটি কর্ষণ বন্ধ থাকে। দেবী মূর্তি ঢাকা থাকে কাপড়ে। এই তিনদিন পুজোও বন্ধ থাকে অনেক মন্দিরে।
মাটির উপরে এই কদিন আগুন জ্বালিয়ে রান্না করেন না সন্ন্যাসী, ব্রহ্মচারী ও বিধবা মহিলারা। যাঁরা অম্বুবাচী কঠোরভাবে পালন করেন, তাঁরা এই তিন দিন খেয়ে থাকেন শুধু ফল-মিষ্টি। এই তিনদিন কোনও শুভ কাজ করা হয় না। ২২ জুন (৭ আষাঢ়) থেকে শুরু হয়েছে। এরপর থেকে ৩ দিন চলে ২৫ জুন (১০ আষাঢ়) শেষ হবে এই পর্যায়।
তন্ত্র সাধনার অন্যতম সিদ্ধস্থান আসামের (Assam) গুয়াহাটির কামাখ্যা মন্দির। ৫১ শক্তিপীঠের মধ্যে অন্যতম হল এই কামাখ্যা মন্দির। এখানে সতীর অঙ্গ পড়েছিল। কামাখ্যা মন্দিরে এলে কেউ খালি হাতে যায় না। নিজের ভক্তদের সমস্ত মনস্কামনা পূরণ করেন কামাখ্যা দেবী। সারা বছর এই মন্দির খোলা থাকলেও অম্বুবাচীর সময়ে কামাখ্যা মন্দির (Kamakhya) বন্ধ থাকে। হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রে অম্বুবাচীর বিশেষ মাহাত্ম্য স্বীকৃত। চলতি বছর ২২ জুন থেকে অম্বুবাচী শুরু হবে। শেষ হবে ২৫ জুন। অম্বুবাচী উপলক্ষে কামাখ্যা মন্দিরে একটি মেলা আয়োজিত হয়। কামাখ্যা মন্দিরের মাহাত্ম্য, কী এই অম্বুবাচী, এর ধর্মীয় মাহাত্ম্য সম্পর্তে আলোচনা করা হল এখানে।
অনেকের বিশ্বাস ,
- অম্বুবাচীর সময়টুকু বিধবা মহিলারা তিন দিন ধরে ব্রত রাখেন।
- অম্বুবাচীর আগের দিন রান্না করা খাবার তাঁরা তিন দিন ধরে খেতে পারেন।
- তবে তিন দিনের পুরনো খাবার খাওয়া তো সম্ভব নয়, তাই অনেকেি ফলমূল খেয়ে কাটিয়ে দেন সময়টা।
- তিন দিন তারা কোন গরম খাবার খান না।
- এই সময় দেবীপুজো করা হয় না।
- অম্বুবাচীর সময় হাল ধরা, গৃহ প্রবেশ, বিবাহ ইত্যাদি শুভ কাজ করা নিষিদ্ধ থাকে
- দেবীর মুখ ঢেকে রাখা হয়।
মন্দির থেকে এই সময় লাল তরল নিঃসৃত হয় বলে বিশ্বাস
ওড়িশায় এই পার্বণকে ‘রজ উৎসব’ বলা হয়। সতীপীঠ কামাক্ষ্যায় এই উৎসব বড় করে পালিত হয়। কথিত আছে, এই সময় মন্দির থেকে লাল তরল নিঃসৃত হয়। দেবীর ঋতুকাল সমাগত মনে করে উৎসব পালিত হয় তখন।
অম্বুবাচী মেলা আমেটি বা তান্ত্রিক উর্বরতা উত্সব নামেও পরিচিত এবং এটি চার দিনের মেলা (মেলা)। এটি পূর্বাঞ্চলে প্রচলিত তান্ত্রিক শক্তি সাধনার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িতভারতএবং থেকে তান্ত্রিক সাধুদের সমাবেশের কারণে বিখ্যাতভারতএবং বিদেশে। এই চার দিনেই কিছু তান্ত্রিক বাবা জনসমক্ষে হাজির হন। তান্ত্রিক সন্ন্যাসীরা মিডিয়া ও বিদেশীদেরও আকৃষ্ট করে। এবং তান্ত্রিক বাবারা অসংখ্য অনন্য আচার-অনুষ্ঠান এবং ব্যায়াম করে তাদের ছবি তোলা হয় এবং সারা বিশ্বের পত্রিকা ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। তান্ত্রিক, অঘোরী এবং সাধুরা এই সময়কালে হবন, আচার, গান এবং নাচ করে। তান্ত্রিক সাধুদের সাথে দেখা করতে এবং তাদের আশীর্বাদ নিতে দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন। এছাড়া গ্রামীণ কারুশিল্প মেলার জন্যও উৎসবটি প্রসিদ্ধ।
এটি ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে দেবী কামাখ্যা অম্বুবাচীর দিনগুলিতে তার বার্ষিক মাসিক চক্রের মধ্য দিয়ে যান। মন্দির তিন দিন বন্ধ থাকে – মাসিকের সময়কাল।চতুর্থ দিনে মন্দিরের বাইরে বিপুল সংখ্যক মানুষ অপেক্ষা করে, কখন মন্দির খোলা হবে। এই সময়ে কামাখ্যা মন্দিরে সারা দেশের সন্ন্যাসী এবং পাণ্ডারা সমবেত হয়।এই অঞ্চলের অনেক মন্দির তিন দিন বন্ধ থাকে। এই তিন দিনে জমি চাষ করা বা মাটি কাটা নিষিদ্ধ।
মন্দিরটি যখন আবার খুলে যায় তখন বিপুল সংখ্যক ভক্তরা উন্মত্ত ভিড় করেন যখন মন্দিরটি অনন্য ‘প্রসাদ’ গ্রহণ করে যা ছোট ছোট কাপড়ের টুকরো, যা দেবী কামাখ্যার ঋতুস্রাবের তরল দ্বারা অনুমিতভাবে আর্দ্র। এটি অত্যন্ত শুভ এবং শক্তিশালী বলে মনে করা হয়।
অম্বুবাচীর দিনক্ষণ
২২ জুন অর্থাৎ ৭ ই আষাঢ় সন্ধ্যা ৬ টা ৩১ মিনিটে পড়ছে অম্বুবাচীর (Ambubachi 2024) তিথি। আর তা শেষ হবে ১০ আষাঢ় অর্থাৎ ২৫ মে রাত ১ টা গতে। প্রসঙ্গত, এই অম্বুবাচী তিথিতে কামাখ্যা মন্দিরে বিশেষ পুজো পালিত হয়। এই সময় শুভ কাজ করা নিষিদ্ধ থাকে। করা হয় না কৃষিকাজ। এই সময় ব্রহ্মচারী, বিধবা, যোগী পুরুষকরা ফলাহার করে থাকেন, আগুনে রান্না কিছু তাঁরা খান না। এই রীতি পালনের নেপথ্য়ে রয়েছে একটি বিশ্বাস।
বিশ্বাস রয়েছে, আষাঢ় মাসের মৃগশিরা নক্ষত্রের চতুর্থপদে ঋতুমতী হন ধরিত্রী। পৃথিবীকে ধরিত্রী মাতা রূপে সম্বোধন করে শাস্ত্র মতে এই ৩ দিন কোনও মাটি খুঁড়ে চাষাবাদের কাজ হয় না। যেহেতু ঋতুমতী মহিলারাই কেবল সন্তান ধারণ করতে পারেন, তাই মনে করা হয় অম্বুবাচীর পর ধরিত্রীও সেই রূপেই আরও শস্য শ্যামলা হয়ে ওঠেন। এই বিশ্বাস থেকে ৩ দিন দেবী মন্দিরে ঢাকা থাকে দেবীর মূর্তি। অম্বুবাচী (Ambubachi) কাটলে শুরু হয় পুজো, মঙ্গলানুষ্ঠান। অন্যদিকে, ধরিত্রীর উপর কাঠ চাপিয়ে আগুন ধরিয়ে এই সময় করা রান্নার পদ মুখে নেননা বহু যোগী পুরুষ, সন্ন্যাসী, বৈধব্যে থাকা মহিলারা।
অম্বুবাচী মেলা কখন পালন করা হয়?
অম্বুবাচী ‘আমেটি’ বা ‘আমোটি’ নামেও পরিচিত। এটি উত্তর-পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সমাবেশ। ‘অম্বু’ শব্দের অর্থ জল এবং ‘বাসি’ বা ‘বাচি’ অর্থ প্রবাহিত। অসমীয়া/বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে বর্ষা ঋতুতে উৎসবটি পালন করা হয় যা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের 21 বা 22শে জুনের কাছাকাছি পড়ে। এটি এমন সময় যখন সূর্য মিথুনের রাশিতে থাকে এবং আদ্রা নক্ষত্রের প্রথম পদে প্রবেশ করে (তবে এটি খুব কমই ঘটে)।
ঐতিহ্যগত বিশ্বাস এই সময়ে, যে দেবীকে পৃথিবী মাতা হিসাবে পূজিত করা হয়, তিনি তার বার্ষিক মাসিকের সময়কালে প্রবেশ করেন। প্রাচীন কৃষি ধারণার সাথে অম্বুবাচীর গভীর সম্পর্ক রয়েছে যা সেই মাতৃভূমিকে একজন উর্বর নারীর সাথে তুলনা করে।
দেবী অম্বুবাচীর অঙ্গবস্ত্র – দেবী দ্বারা পরিহিত রক্তমাখা কাপড়
অম্বুবাচীর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল অত্যন্ত সম্মানিত অঙ্গবস্ত্র বা রক্তবস্ত্র, প্রথম তিন দিন মন্দিরের পীঠস্থান ঢেকে রাখার জন্য ব্যবহৃত লাল কাপড়ের টুকরো।
প্রচুর পরিমাণে ভক্তরা একটি কাপড়ের টুকরো পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে যা কারও শরীরে বেঁধে রাখলে এটি খুব শুভ এবং উপকারী বলে বিশ্বাস করা হয়।
কামাখ্যা মন্দির
গুয়াহাটির (Ghuahati) কামাখ্যা মন্দিরে দেবীর কোনও মূর্তি নেই। এখানে সতীর (Sati) যোনি পড়েছিল। তাই এখানে দেবী সতীর যোনির পুজোর বিধান রয়েছে। প্রতিবছর জুন মাসে দেবী সতী রজস্বলা হন। এই সময়কালই অম্বুবাচী (Ambubachi) নামে পরিচিত। তিন দিন মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকে। পরে বিশেষ পুজোর মাধ্যমে কপাট খোলা হবে। আবার এ সময়ে প্রসাদ হিসেবে একটি লাল ভেজা কাপড় দেওয়া হয়। দেবীর রজস্বলা হওয়ার আগে সেই স্থানে সাদা কাপড় বিছিয়ে দেওয়া হয়। পরে সেটি লাল রঙের হয়। এই পোশাককে অম্বুবাচী বস্ত্র বলা হয়। শাস্ত্র মতে এখানে আগত ভক্তদের ওপর দেবীর আশীর্বাদ থাকে। শ্রদ্ধা-ভক্তি-সহ সতীর পুজো করলে ব্যক্তির সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ হয়।
অম্বুবাচী উৎসব কি?
অম্বুবাচী উৎসব বর্ষাকালে উদযাপিত হয়, এই বিশ্বাস করে যে এই সময়ে দেবী কামাখ্যা তার বার্ষিক ঋতুচক্র অনুভব করছেন। হিন্দু ক্যালেন্ডারের “আষাঢ়” মাসের 7 তম দিন থেকে মাসের দশম দিন পর্যন্ত ঐতিহ্যগত মাসিক চক্রের নির্জনতা হিসাবে মন্দিরগুলি টানা তিন দিন বন্ধ থাকে । 12 তম দিনে, দরজাগুলি আনুষ্ঠানিকভাবে খোলা হয় এবং মন্দিরে একটি বড় উত্সব অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বাস হল যে দেবী দ্বারা আনা উর্বরতা ভক্তদের আশীর্বাদ করবে এবং তাদের বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। অম্বুবাচী উৎসবের তাৎপর্য
“অম্বুবাচী” এর অর্থ “জলের সাথে কথা বলা”, যার অর্থ বছরের এই সময়ে প্রত্যাশিত বৃষ্টি মাটিকে উর্বর করে তোলে এবং নতুন শিশুর জন্মের জন্য প্রস্তুত করে। এই সময়ে দৈনিক উপাসনা করার অনুমতি দেওয়া হয় না, এবং সম্পূর্ণ কৃষি প্রক্রিয়া, যেমন লাঙ্গল, খনন, বপন বা ফসল রোপণ করা নিষিদ্ধ। এই সময়ে ভক্তদের জন্য খাবার রান্না করা নিষিদ্ধ। চতুর্থ দিনে, থালা-বাসন, পোশাক এবং অন্যান্য জিনিসগুলি জল ছিটিয়ে প্রতীকীভাবে ধুয়ে এবং বিশুদ্ধ করা হয়।
কামাখ্যা (Kamakhya Temple) দেবীর প্রতি ভক্তি শুরু হয় শুদ্ধি ও অন্যান্য আচারের মাধ্যমে। মাজারের প্রবেশদ্বার এই আচারগুলি অনুসরণ করে সৌভাগ্যের চিহ্ন বলে মনে করা হয়। প্রসাদও দেওয়া হয় ভক্তদের। অঙ্গোদক বা অঙ্গবস্ত্র নামে দুটি রূপে প্রসাদ দেওয়া হয়। Angodak একটি শব্দ যার অর্থ “বসন্ত থেকে জল”, শরীর শোষণ করে প্রবাহিত তরল উল্লেখ করে। অঙ্গবাস্ত্র বলতে এমন কাপড় বোঝায় যা শরীর ঢেকে রাখে, লাল কাপড়ের একটি আইটেম যা মাসিক চক্রের সময় পাথরের ইয়োনিকে ঢেকে রাখে।
অম্বুবাচীতে কী করবেন, কী করবেন না

শাস্ত্র মতে অম্বুবাচীর সময়ে বিশেষ কিছু কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এগুলি মেনে চলা উচিত।
১. যে কদিন অম্বুবাচী থাকবে, সে সময়ে ঠাকুর ঘরে দেবীর ছবি বা মূর্তি লাল কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখবেন। অম্বুবাচী শেষ হওয়ার পর দেবীর আসন পাল্টে নিন। তার পর স্নান করিয়ে পুজো শুরু করতে পারেন।
২. তবে এ সময়ে গুরু পুজো করা যায়।
৩. বাড়িতে তুলসী গাছ থাকলে তার গোড়া মাটি দিয়ে উঁচু করে রাখতে ভুলবেন না।
৪. এ ছাড়াও কিছু কিছু কাজ অম্বুবাচীর সময়ে করা উচিত নয়। এ সময়ে বৃক্ষ রোপণ, কৃষি কাজ করা বর্জিত।
৫. কোনও শুভ কাজ করবেন না।
৬. মন্ত্রোচ্চারণ না-করে পুদো করবেন। কবে ধূপকাঠি ও প্রদীপ জ্বালাতে পারেন।
আষাঢ় মাসের ৭ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত পালন করা হয় এই রীতি। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে বলা হয়, ধরিত্রী মা ঋতুমতী হওয়ার কারণে ভূমিকর্ষণ ও বৃক্ষরোপণ করা নিষিদ্ধ। মনে করা হয় এই তিন দিনে গৃহ প্রবেশ, বিবাহ ও অন্যান্য শুভ কাজ করা উচিত নয়। এছাড়াও আরও যা যা বলা হয়-
১) হিন্দু শাস্ত্র মতে, এই সময়ে অন্য কোনও বিশেষ পুজোর আয়োজন না করাই ভালো। তবে, কোনও কোনও বছর এই সময়ে রথযাত্রার উৎসব পড়লে, তা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই করা যেতে পারে। কারণ রথযাত্রাকে নিত্যকর্ম হিসাবেই ধরা হয়।
২) যাঁরা আদি শক্তির বিভিন্ন রূপ পুজো করেন, যেমন মা কালী, দেবী দুর্গা, দেবী জগদ্ধাত্রী, মা বিপত্তারিণী,মা শীতলা, দেবী চণ্ডীর মূর্তি বা পট পূজা করেন, তাঁরা এই সময়ে মূর্তি বা পট লাল কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখবেন।
৩) অম্বুবাচীর (Ambubachi) দিনগুলিতে পুজোর সময়ে কোনও মন্ত্র পাঠ করবেন না, কেবল ধূপ ও দ্বীপ সহযোগে ঠাকুর প্রণাম করবেন।
৪) অম্বুবাচীতে (Ambubachi) দেবীর মূর্তি বা পট কখনওই স্পর্শ করা উচিত নয় বলে মনে করে হিন্দু শাস্ত্র।
৫) অম্বুবাচীতে (Ambubachi) গুরুর পুজা চলতে পারে। কারওর গুরু যদি নারী হন, অর্থাৎ গুরুমা হন, তাহলেও পূজা চলতে পারে, তাতে কোনও দোষ নেই বলে মনে করে হিন্দুশাস্ত্র ।
৬) যাঁরা শাক্তমন্ত্রে দীক্ষিত, তাঁরা এইসময়ে গুরুমন্ত্র জপ করতে পারবেন। হিন্দুশাস্ত্র মতে জপে কোনও দোষ নেই বলে মনে করা হয়।
যেহেতু এই কয়েকদিন মা ঋতুমতী থাকেন তাই বলা হয় এই সময় যৌন সংসর্গও অনুচিত। মা ঋতুমতী হলে তবেই ধরিত্রী শস্য শ্যামলা হবে, ফসল ফলবে। ধরিত্রী মায়ের সঙ্গে মেয়েদেরও তুলনা করা হয়। সে কারণেই এই কয়েকদিন যৌন সংগম থেকে বিরত থাকাই ভালো। কারণ মেয়েরা ঋতুমতী হলে তবেই সন্তান ধারণে সক্ষম হন। মেয়েরাই তো আলোর উৎস। এছাড়াও কামাক্ষ্যা কামের দেবী হিসেবে পরিচিত।

মহাভারত (Mahavarat) , ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ, নীল তন্ত্র, রুদ্রযামল, শিবচরিত, শাক্তানন্দ-তরঙ্গিণী এবং মহাপীঠ নিরূপণ ও মঙ্গলকাব্যের সূত্র ধরে বলা যায় , সতীর ৫১ খন্ডের একটি খণ্ড এই কামাক্ষা ধামে পতিত হয়েছিল সেটি হলো সতীর অঙ্গের “যোনি” খণ্ড , তাই এই পীঠস্থান কে শ্রেষ্ঠ পীঠ বলা হয়ে থাকে এবং এর জন্যে কামেশ্বরীও বলা হয়ে থাকে। তাই অম্বুবাচীতে কামাক্ষা ধামে যোনী শিলা হতে এখনো পর্যন্ত অদ্ভুত ধরনের লাল জলের ধারা বইতে দেখা যায় এবং ওই জল ব্রহ্মপুত্র নদে বয়ে যেতে দেখা যায় । ফলে তখন ব্রহ্মপুত্রের (Brahmaputra) জলও লাল হয়ে যায়। তাই এই সময় পৃথিবীর সমস্ত জলরাশি অপবিত্র থাকে। আর এই অম্বুবাচী তিথি পর্যন্ত সর্বত্রই ঝিরিঝিরি বা কখনও মুষলধারে বৃষ্টি হয়। ঠিক যেমনটা হয় রজস্রাবের সময়ে।
অন্যান্য তথ্য – অম্বুবাচী মেলা ট্রিভিয়া
- বার্ষিক চার দিনের মেলায় প্রায় এক মিলিয়ন ভক্ত মন্দিরে আসেন।
- নাগা সাধু (নগ্ন বাবা) আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। তবে, তাদের ভক্তদের সাথে মিশতে এবং মূল ভেন্যুতে ঘোরাফেরা করতে দেওয়া হবে না। অভয়ানন্দ আশ্রমে মন্দিরের পশ্চিম অংশে তাদের জন্য আলাদা জোনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
- এ বছর নাগা সাধুদের মিছিল হবে না।
- বার্ষিক মেলাটি ভারত, নেপাল এবং বাংলাদেশের সমস্ত অংশ থেকে ভক্তদের আকর্ষণ করে। মেলায় গবেষকসহ হাজার হাজার বিদেশি অংশ নেয়।
- নাহারবাড়ি, বংশীবাগান, অভয়ানন্দ আশ্রম, সিদ্ধেশ্বরী মন্দির এবং কামাখ্যা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভক্তদের জন্য পাঁচটি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
- সম্পূর্ণ নীলাচল পাহাড়, যার উপর কামাখ্যা মন্দির এবং অন্যান্য মন্দিরের একটি সিরিজ অবস্থিত, একটি নো-তামাক জোন ঘোষণা করা হয়েছে।
- পুরো নীলাচল পাহাড়ে প্লাস্টিক, পলিথিন এবং অন্যান্য অ-জৈব-নিচনযোগ্য জিনিসপত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
- দুই লাখেরও বেশি মানুষকে দিনে দু’বেলা বিনামূল্যে খাবার দেওয়া হবে।
অম্বুবাচী মেলা
বাংলায় একটা কথা প্রচলিত আছে, ‘কীসের বার কীসের তিথি, আষাঢ়ের সাত তারিখ অম্বুবাচী।’ এবারও অম্বুবাচী শুরু হয়েছে ওই দিনেই। অম্বুবাচীর সময় অনেক তীর্থস্থানে মেলার আয়োজন হয়। অম্বুবাচী মেলা খুবই বিখ্যাত সতীপীঠ কামাক্ষ্যায়।
এই সময় দেবীর মন্দির বন্ধ থাকে। আর সকলে মন্দির ঘিরে কীর্তন করেন। এরপর চতুর্থ দিনে এই পর্যায় শেষ হলে মন্দির খুলে যায়। রক্তবস্ত্র আশীর্বাদ হিসেবে মেলে। ভক্তদের বিশ্বাস, এই কাপড় গ্রহণ করলে মনের সব আশাপূর্ণ হয়।
(Collected)