www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

April 20, 2025 8:00 am

'খড়দা' বলা হয় মন্দির নগরি। বহু প্রাচীন এই জনপদে আছে বহু মন্দির। আজ আমরা মূলত গঙ্গাপারে অবস্থিত অন্যতম হেরিটেজ শ্যামসুন্দর মন্দিরের কথা বলবো।

‘খড়দা’ বলা হয় মন্দির নগরি। বহু প্রাচীন এই জনপদে আছে বহু মন্দির। আজ আমরা মূলত গঙ্গাপারে অবস্থিত অন্যতম হেরিটেজ শ্যামসুন্দর মন্দিরের কথা বলবো। বহু কাল আগের খড়দহ এখন লোকমুখে খড়দা। নাট্যকার ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদের জন্মভূমি এবং রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য স্থান। বিপ্রদাস পিপিলাইয়ের ‘মনসা বিজয়’ কাব্য এবং রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু রচনায় পাওয়া যায় খড়দহের উল্লেখ। তবে শ্রীপাট খড়দার খ্যাতি প্রধানত শ্রীশ্রীরাধা-শ্যামসুন্দর জীউয়ের মন্দিরের জন্যই। এই ঐতিহাসিক রাধা-শ্যামসুন্দর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করেই ঘটেছিল সেই ধর্মবিপ্লব। শ্রীরাধা-শ্যামসুন্দর জীউয়ের মন্দির স্থানীয় বাসিন্দাদের মুখে হয়ে গিয়েছে ‘শ্যামের বাড়ি’। শ্রীশ্যামসুন্দরের মন্দিরের নিকটে কুঞ্জবাটী। মহাপ্রভুর কাছ থেকে সমগ্র বাংলায় হরিনাম প্রচারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে সূর্যদাস সরখেলের দুই কন্যার পাণিগ্রহণ করেন নিত্যানন্দ। তার পর কুঞ্জবাটীতেই সংসার। এখানেই বীরভদ্র গোস্বামীর জন্ম।

বলা হয়, চৈতন্যদেব ও নিত্যানন্দ অপ্রকট হওয়ার পর বীরভদ্র দৈবাদেশ পান, মালদহের নবাবের রাজপ্রাসাদের তোরণে রয়েছে একটি কালো পাথর। কিংবদন্তি অনুসারে, ওই পাথরটিকে রাজা পরীক্ষিৎ ওই তোরণে স্থাপন করেন। তার পর যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞের সময়ে শ্রীকৃষ্ণ ওই পাথরটির উপর দাঁড়িয়ে যজ্ঞে আগত ব্রাহ্মণদের পা ধুইয়ে দেন। বীরভদ্রের প্রতি দৈবাদেশ, সেই পাথর থেকে কৃষ্ণ বিগ্রহ তৈরি করিয়ে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

মালদহের নবাব সংবাদ পেয়ে বীরভদ্রকে বন্দি করলেন এবং ষড়যন্ত্র করলেন, গোমাংস খাইয়ে বীরভদ্রের জাত নষ্ট করা হবে। বীরভদ্রের এই অভিযানে আছে অলৌকিক দৈব মহিমার অনুষঙ্গ। রাজসভায় বীরভদ্রের সামনে ঢাকা দেওয়া একটি খাবারের থালা আনা হয়। ঢাকনা সরানো হলে দেখা গেল, গোমাংসের বদলে থালায় রয়েছে পুষ্পমাল্য। নবাব দমলেন না। সুরার পাত্র আনিয়ে বীরভদ্রকে পান করতে বললেন। এ বারেও দেখা যায়, সুরার বদলে পাত্রে রয়েছে দুধ। কাণ্ড দেখে নবাব ভয় পেলেন। তিনি বীরভদ্রের কাছে ক্ষমা চাইলেন। অনুরোধ করলেন, বীরভদ্র যদি তাঁর দৈব ক্ষমতার সাহায্যে নবাবের রুগ্ণ জামাইকে সুস্থ করে তোলেন। বীরভদ্র শর্ত দেন, জামাইয়ের সুস্থ শরীরের বিনিময়ে তিনি নিয়ে যাবেন রাজপ্রাসাদের তোরণে রক্ষিত বিশেষ কষ্টিপাথরটি। নবাব সম্মতি দিলেন। কিন্তু বুঝতে পারলেন না, বীরভদ্র কী উপায়ে পাথরটি খুলে নেবেন?

বীরভদ্রের নির্দেশে সুরার পাত্রের দুধটি জামাইকে পান করানো হয়। বীরভদ্রের অলৌকিক শক্তির জোরেই হোক বা ভাগ্যবলে হোক, নবাবের জামাই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন। অপর দিকে আচমকাই আকাশ জুড়ে খেলে যায় তীব্র বিদ্যুতের ঝলক। সঙ্গে প্রচণ্ড বজ্রপাত। সবাই অবাক হয়ে দেখলেন, বজ্রের আঘাতে তোরণ থেকে খুলে পড়েছে বিরাট এক কষ্টিপাথরের খণ্ড। জনশ্রুতি, বীরভদ্র কষ্টিপাথরটি ভাল করে খড়ে জড়িয়ে মালদহের গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘প্রভু, তুমি খড়দহে যাও!’ আবার কারও মতে, বীরভদ্র গোস্বামী বাঁশের মাচায় খড়ের আবরণ দিয়ে পাথরটি জলপথে ভাসিয়ে খড়দহে পাঠিয়েছিলেন। বলা হয়, পাথরটি জলে ভাসতে ভাসতে গঙ্গাতীরবর্তী আকনার একটি স্নানের ঘাটে এসে আটকে যায়। তা দিয়েই তৈরী হয় দুটি মূর্তি।

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *