তন্ত্র সাধনার অন্যতম সিদ্ধস্থান আসামের (Assam) গুয়াহাটির কামাখ্যা মন্দির। ৫১ শক্তিপীঠের মধ্যে অন্যতম হল এই কামাখ্যা মন্দির। এখানে সতীর অঙ্গ পড়েছিল। কামাখ্যা মন্দিরে এলে কেউ খালি হাতে যায় না। নিজের ভক্তদের সমস্ত মনস্কামনা পূরণ করেন কামাখ্যা দেবী। সারা বছর এই মন্দির খোলা থাকলেও অম্বুবাচীর সময়ে কামাখ্যা মন্দির (Kamakhya) বন্ধ থাকে। হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রে অম্বুবাচীর বিশেষ মাহাত্ম্য স্বীকৃত। চলতি বছর ২২ জুন থেকে অম্বুবাচী শুরু হবে। শেষ হবে ২৬ জুন। অম্বুবাচী উপলক্ষে কামাখ্যা মন্দিরে একটি মেলা আয়োজিত হয়। কামাখ্যা মন্দিরের মাহাত্ম্য, কী এই অম্বুবাচী, এর ধর্মীয় মাহাত্ম্য সম্পর্তে আলোচনা করা হল এখানে।
অম্বুবাচীর দিনক্ষণ
অম্বুবাচী শুরু হবে ২২ জুন, বৃহস্পতিবার (বাংলা ৬ আষাঢ়) ভোর রাত ২টো ৩২ মিনিটে। শেষ হবে ২৬ জুন, সোমবার (বাংলা ১০ আষাঢ়) দুপুর ২টো ৫৬ মিনিটে।
কামাখ্যা মন্দির
গুয়াহাটির (Ghuahati) কামাখ্যা মন্দিরে দেবীর কোনও মূর্তি নেই। এখানে সতীর (Sati) যোনি পড়েছিল। তাই এখানে দেবী সতীর যোনির পুজোর বিধান রয়েছে। প্রতিবছর জুন মাসে দেবী সতী রজস্বলা হন। এই সময়কালই অম্বুবাচী (Ambubachi) নামে পরিচিত। তিন দিন মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকে। পরে বিশেষ পুজোর মাধ্যমে কপাট খোলা হবে। আবার এ সময়ে প্রসাদ হিসেবে একটি লাল ভেজা কাপড় দেওয়া হয়। দেবীর রজস্বলা হওয়ার আগে সেই স্থানে সাদা কাপড় বিছিয়ে দেওয়া হয়। পরে সেটি লাল রঙের হয়। এই পোশাককে অম্বুবাচী বস্ত্র বলা হয়। শাস্ত্র মতে এখানে আগত ভক্তদের ওপর দেবীর আশীর্বাদ থাকে। শ্রদ্ধা-ভক্তি-সহ সতীর পুজো করলে ব্যক্তির সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ হয়।
অম্বুবাচীতে কী করবেন, কী করবেন না

শাস্ত্র মতে অম্বুবাচীর সময়ে বিশেষ কিছু কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এগুলি মেনে চলা উচিত।
১. যে কদিন অম্বুবাচী থাকবে, সে সময়ে ঠাকুর ঘরে দেবীর ছবি বা মূর্তি লাল কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখবেন। অম্বুবাচী শেষ হওয়ার পর দেবীর আসন পাল্টে নিন। তার পর স্নান করিয়ে পুজো শুরু করতে পারেন।
২. তবে এ সময়ে গুরু পুজো করা যায়।
৩. বাড়িতে তুলসী গাছ থাকলে তার গোড়া মাটি দিয়ে উঁচু করে রাখতে ভুলবেন না।
৪. এ ছাড়াও কিছু কিছু কাজ অম্বুবাচীর সময়ে করা উচিত নয়। এ সময়ে বৃক্ষ রোপণ, কৃষি কাজ করা বর্জিত।
৫. কোনও শুভ কাজ করবেন না।
৬. মন্ত্রোচ্চারণ না-করে পুদো করবেন। কবে ধূপকাঠি ও প্রদীপ জ্বালাতে পারেন।
আষাঢ় মাসের ৭ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত পালন করা হয় এই রীতি। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে বলা হয়, ধরিত্রী মা ঋতুমতী হওয়ার কারণে ভূমিকর্ষণ ও বৃক্ষরোপণ করা নিষিদ্ধ। মনে করা হয় এই তিন দিনে গৃহ প্রবেশ, বিবাহ ও অন্যান্য শুভ কাজ করা উচিত নয়। এছাড়াও আরও যা যা বলা হয়-
১) হিন্দু শাস্ত্র মতে, এই সময়ে অন্য কোনও বিশেষ পুজোর আয়োজন না করাই ভালো। তবে, কোনও কোনও বছর এই সময়ে রথযাত্রার উৎসব পড়লে, তা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই করা যেতে পারে। কারণ রথযাত্রাকে নিত্যকর্ম হিসাবেই ধরা হয়।
২) যাঁরা আদি শক্তির বিভিন্ন রূপ পুজো করেন, যেমন মা কালী, দেবী দুর্গা, দেবী জগদ্ধাত্রী, মা বিপত্তারিণী,মা শীতলা, দেবী চণ্ডীর মূর্তি বা পট পূজা করেন, তাঁরা এই সময়ে মূর্তি বা পট লাল কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখবেন।
৩) অম্বুবাচীর (Ambubachi) দিনগুলিতে পুজোর সময়ে কোনও মন্ত্র পাঠ করবেন না, কেবল ধূপ ও দ্বীপ সহযোগে ঠাকুর প্রণাম করবেন।
৪) অম্বুবাচীতে (Ambubachi) দেবীর মূর্তি বা পট কখনওই স্পর্শ করা উচিত নয় বলে মনে করে হিন্দু শাস্ত্র।
৫) অম্বুবাচীতে (Ambubachi) গুরুর পুজা চলতে পারে। কারওর গুরু যদি নারী হন, অর্থাৎ গুরুমা হন, তাহলেও পূজা চলতে পারে, তাতে কোনও দোষ নেই বলে মনে করে হিন্দুশাস্ত্র ।
৬) যাঁরা শাক্তমন্ত্রে দীক্ষিত, তাঁরা এইসময়ে গুরুমন্ত্র জপ করতে পারবেন। হিন্দুশাস্ত্র মতে জপে কোনও দোষ নেই বলে মনে করা হয়।
যেহেতু এই কয়েকদিন মা ঋতুমতী থাকেন তাই বলা হয় এই সময় যৌন সংসর্গও অনুচিত। মা ঋতুমতী হলে তবেই ধরিত্রী শস্য শ্যামলা হবে, ফসল ফলবে। ধরিত্রী মায়ের সঙ্গে মেয়েদেরও তুলনা করা হয়। সে কারণেই এই কয়েকদিন যৌন সংগম থেকে বিরত থাকাই ভালো। কারণ মেয়েরা ঋতুমতী হলে তবেই সন্তান ধারণে সক্ষম হন। মেয়েরাই তো আলোর উৎস। এছাড়াও কামাক্ষ্যা কামের দেবী হিসেবে পরিচিত।

মহাভারত (Mahavarat) , ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ, নীল তন্ত্র, রুদ্রযামল, শিবচরিত, শাক্তানন্দ-তরঙ্গিণী এবং মহাপীঠ নিরূপণ ও মঙ্গলকাব্যের সূত্র ধরে বলা যায় , সতীর ৫১ খন্ডের একটি খণ্ড এই কামাক্ষা ধামে পতিত হয়েছিল সেটি হলো সতীর অঙ্গের “যোনি” খণ্ড , তাই এই পীঠস্থান কে শ্রেষ্ঠ পীঠ বলা হয়ে থাকে এবং এর জন্যে কামেশ্বরীও বলা হয়ে থাকে। তাই অম্বুবাচীতে কামাক্ষা ধামে যোনী শিলা হতে এখনো পর্যন্ত অদ্ভুত ধরনের লাল জলের ধারা বইতে দেখা যায় এবং ওই জল ব্রহ্মপুত্র নদে বয়ে যেতে দেখা যায় । ফলে তখন ব্রহ্মপুত্রের (Brahmaputra) জলও লাল হয়ে যায়। তাই এই সময় পৃথিবীর সমস্ত জলরাশি অপবিত্র থাকে। আর এই অম্বুবাচী তিথি পর্যন্ত সর্বত্রই ঝিরিঝিরি বা কখনও মুষলধারে বৃষ্টি হয়। ঠিক যেমনটা হয় রজস্রাবের সময়ে।