পূর্ব ভারতের অন্যতম ‘পীঠ’ অসমের কামাখ্যা মন্দির। এটি ৫১ শক্তিপীঠের অন্যতম। কথিত আছে, এখানে সতীর দেহত্যাগের পর বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রে যোনি ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।
বারাণসীর বৈদিক ঋষি বাৎস্যায়ন খ্রিস্টিয় প্রথম শতাব্দীতে নেপালের রাজার দ্বারস্থ হয়ে উপজাতীয় গোষ্ঠীগুলিকে হিন্দুধর্মে ধর্মান্তরিত ও তাদের নরবলি প্রথার গ্রহণযোগ্য বিকল্প চালু করার জন্য অনুরোধ করেন।
বাৎস্যায়নের মতে, পূর্ব হিমালয়ের গারো পাহাড়ে তারা দেবীর তান্ত্রিক পূজা প্রচলিত ছিল। সেখানে আদিবাসীরা দেবীর যোনিকে ‘কামাকি’ নামে পূজা করত। ব্রাহ্মণ্যযুগে কালিকাপুরাণে সব দেবীকেই মহাশক্তির অংশ বলা হয়েছে। সেই হিসেবে, কামাক্ষ্যাও মহাশক্তির অংশ হিসেবে পূজিত হন। কামাখ্যা ৫১ শক্তিপীঠের অন্যতম। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, কামাখ্যা মন্দিরে দেবী সতীর গর্ভ এবং যোনি পড়েছিল। সেকারণেই দেবী কামাখ্যাকে ঊর্বরতার দেবী বা “রক্তক্ষরণকারী দেবী” বলা হয়। এই মন্দির চত্বরে দশ মহাবিদ্যার মন্দির রয়েছে।
দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বিখ্যাত অম্বুবাচী মেলার আয়োজন করা হয় অসমের কামাখ্যা মন্দির সংলগ্ন এলাকায়। হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী আষাঢ় মাসে মৃগ শিরা নক্ষত্রের তিনটি পদ শেষ হলে পৃথিবী বা ধরিত্রী মা ঋতুময়ী হয়। এই সময়টিতে অম্বুবাচী পালন করা হয়। আর এই উপলক্ষে বিশাল এক মেলার আয়োজন করা হয় সেখানে। অম্বুবাচীর দিন থেকে মোট তিনদিন দেবী কামাক্ষ্যার মন্দির বন্ধ থাকে। সেই তিনদিন কোনও মাঙ্গলিক কাজ করা যায় না। দেবী দর্শনও নিষিদ্ধ থাকে। চতুর্থ দিন দেবীর স্নান এবং পূজা সম্পূর্ণ হওয়ার পর মন্দিরে দেবী মূর্তি দর্শনের অনুমতি দেওয়া হয়। সেই উপলক্ষে সেখানে উপস্থিত হন লক্ষ লক্ষ ভক্ত। অবাক করা এই ঘটনার সাক্ষী হতে ভিড় জমান দেশি বিদেশি পর্যটকরা। কামাক্ষ্যা মন্দিরের চারদিকে চলে নাম সংকীর্তন। অম্বুবাচীর শেষ দিন ভক্তদের রক্তবস্ত্র উপহার দেওয়া হয়। দেবী পীঠের সেই রক্তবস্ত্র ধারণ করলে মনোকামনা পূর্ণ হয় বলে বিশ্বাস করেন ভক্তরা।