এখন আর আগের মতো গভীর জঙ্গল নেই। তবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রচুর শাল, মহুয়া, শিমুল গাছ। তারই মাঝখান দিয়ে পথ করে নিয়ে আপনাকে পৌঁছাতে হবে কয়েকশো বছরের প্রাচীন মন্দির – গড়জঙ্গলের শ্যামরুপা মন্দির। এই মন্দিরের ধর্মকথার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে অনেক ইতিহাস ও অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষের কথা। কথিত আছে, রাজা লক্ষণ সেন বহুকাল আগে প্রথম দুর্গাপূজা শুরু করেন এই গভীর জঙ্গলে।লক্ষন সেন এই জঙ্গল ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ইচ্ছাই ঘোষকে মন্দিরের দায়িত্ব দেন।তারপর থেকে তিনিই এই মন্দিরের পূজা করতেন।দেবীর স্বপ্নাদেশ দেন ইচ্ছাই ঘোষকে যুদ্ধে যেতে অষ্টমীর দিন,রাজা দেবীর কথা না শুনে সপ্তমীর দিন যুদ্ধে চলে যায়।দেবীর কথা অমান্য করার ফলে রাজা পরাজিত হয় এবং নিহত হয়।তার পর রাজার অনুচড়েরা গড়জঙ্গল থেকে দীর্ঘ দুই কিলোমিটার দূরে দ্বীপসায়ের নামে একটি জলাশয়ে দেবীর মূর্তি বিসর্জন করে দেয়।পরে অষ্টধাতুর মূর্তি বসিয়ে পূজা দেওয়া হয়। এই মন্দিরের যে কোনো জায়গায় দু’দন্ড বসলেই আপনি অনুভব করবেন হিন্দু ধর্মের প্রকৃত সত্যকে। প্রতি মুহূর্তে মনে হবে এটাই সনাতন ধর্মের মূল জায়গা।
এক সময় নরবলির জন্য এই মন্দির খুব বিখ্যাত ছিল। সেই কারণেই ওই জঙ্গলে মানুষ প্রবেশ করতো না। বহু কাপালিক এই মন্দিরে আরাধনা করতেন। সেই জঙ্গল সংলগ্ন ছিল অজয় নদ। কথিত আছে অজয় নদের বিপরীর পরেই থাকতেন ভক্ত কবি জয়দেব।
নরবলির কথা শুনে জয়দেব একদিন একাকী সেই জঙ্গলে প্রবেশ পরে পৌঁছে যায় সেই কাপালিকের কাছে। তিনি কপালিক কে বলেন আপনি তো নরবলি দেন মায়ের পূজার জন্য। আপনি কি নরবলি দিয়ে আমার শ্যামরূপা মাকে দেখতে পারবেন,যদি না পারেন তাহলে আমি আপনাকে নরবলি না দিয়ে দেখাবো আমার শ্যামা মাকে।তবে আমাকে কথা দিতে হবে আর কোনোদিন নরবলি দেবেন না।ভক্তকবি জয়দবের এই কথায় রাজি হলেন কপালিক।ভক্তপ্রেমিক জয়দেব মনে প্রাথনা শুরু করেন প্রথমে ব্যার্থ হয় শ্যামা মাকে দর্শন করাতে।পরে আকুল মনে প্রাথনা করে সফল হয় তার শ্যামা মা শ্যাম রূপে দেখতে পাই ওই কপালিক।মাকে দেখতে পেয়ে ভক্তপ্রেমিক জয়দেবের পদতলে লুটিয়ে পড়ে যায় কপালিক।সেই থেকে বন্ধ হয়ে যায় নরবলি।