‘ঈদ’ একটি আরবি শব্দ – যার অর্থ আনন্দ। সেই অর্থে ইসলাম ধর্মে ঈদ হলো আনন্দের উৎসব। হজরত মুহাম্মদ সা বলেছেন, ‘সব ধর্মে আনন্দের উৎসব আছে, আমাদের আনন্দের উৎসব হলো ঈদ।’ ঈদের দিন নির্ধারিত হয়, চাঁদ দেখার উপরে। সাধারণত ২৯ বা ৩০ দিনের রমজান মাসের ‘রোজা’ পালন করার পরেই আসে ঈদের সেই শুভ দিন। এ বছর ১ মার্চ থেকে রমজান পালন শুরু হয়েছে। তাই ধরে নেওয়া যায় ২৯ বা ৩০ তারিখ ঈদ উৎসব পালন করা হবে।
প্রথম ঈদ উৎসব কবে পালিত হয়, তা নিয়ে ইতিহাস কিছুটা নীরব। তবে প্রমান্য তথ্য বলছে, সম্ভবত প্রথম ঈদ পালিত হয় ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ মার্চ। অন্য মত বলছে ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে মক্কা বিজয়ের প্রায় ১১ দিন পর। আর বাংলায় ঈদ উৎসব শুরু হয় ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে। ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গদেশ মুসলিম অধিকারে এলেও এ দেশে নামাজ, রোজা ও ঈদোৎসবের প্রচলন হয়েছে তার বেশ আগে থেকেই। বঙ্গদেশ যুদ্ধবিগ্রহের মাধ্যমে মুসলিম অধিকারে আসার বহু আগে থেকেই মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া থেকে মুসলিম সুফি, দরবেশ ও সাধকরা ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে উত্তর ভারত হয়ে পূর্ববাংলায় আসেন। অন্য দিকে আরবীয় এবং অন্যান্য মুসলিম দেশের বণিকরা চট্টগ্রাম নৌবন্দরের মাধ্যমেও বাংলার সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। এভাবেই একটি মুসলিম সাংস্কৃতিক তথা ধর্মীয় প্রভাব পূর্ববাংলায় পড়েছিলো।
আরবি ‘ফিতর’ অর্থ উপবাস ভঙ্গ করা। তাই ঈদুল ফিতর অর্থ উপবাস ভঙ্গের আনন্দ। যেহেতু দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর রোজাদার দিনের বেলায় আহার গ্রহণ করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে এবং বিভিন্নভাবে আনন্দ প্রকাশ করে, তাই এর নাম ঈদুল ফিতর। ঈদের দিন সূর্যাস্তের পর ঈদের নামাজ ছাড়া আল্লাহর কাছে কোনো প্রিয় ইবাদত নেই। রমজান শেষে শাওয়ালের চাঁদ দেখে পরের দিন মুসলিম জাতি ঈদগাহে অথবা মসজিদে সমবেত হয়ে মহানন্দের সঙ্গে আমির-ফকির, ছোট-বড়, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সম্মিলিতভাবে যে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করে, তা-ই ঈদুল ফিতরের নামাজ। রমজানের রোজা শেষ করে আল্লাহর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তাঁর মাহাত্ম্য ও বড়ত্ব প্রকাশ করা প্রতিটি মুমিনের জন্য আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মহান আল্লাহ চান যে তোমরা রমজানের সংখ্যাগুলো পূর্ণ করো এবং আল্লাহর মাহাত্ম্য বর্ণনা করো, যেভাবে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। আর এভাবেই হয়তো তোমরা তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারবে।’
ঈদুল ফিতরের দিন ফজরের পর আর কোনো ইবাদত না করে ঈদের নামাজের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা আবশ্যক। নামাজের আগে মেসওয়াক করা, গোসল করা, পবিত্র ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, চোখে সুরমা লাগানো, সামর্থ্য অনুযায়ী উত্তম খাবারের ব্যবস্থা করা, পরিবার-পরিজনসহ খাওয়া, প্রতিবেশী, এতিম, মিসকিন ও গরিব-দুঃখীকে সাধ্যমতো খাওয়ানো, ঈদগাহে যাওয়ার আগে মিষ্টান্ন খাওয়া, সদকাতুল ফিতর আদায় করা, আদায় করতে না পারলেও সম্পদ থেকে ফিতরার অর্থ আলাদা করা, যথাসময়ই ঈদগাহে গমন করা, ঈদগাহে যে পথে যাবে নামাজ শেষে অন্য পথে ফিরে আসা, যাওয়া-আসার পথে তাকবির দেওয়া, যথাসম্ভব হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া, ঈদের খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা ইত্যাদি। ঈদের দিন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হয়, তিনি যেন সমস্ত দুঃখ, যন্ত্রনা থেকে আমাদের মুক্তি দিয়ে আনন্দের জগতে নিয়ে প্রবেশ করেন।