www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

April 20, 2025 1:32 pm

কালকে যিনি হরণ করেন তিনি কালী। কালের কবলে পড়ে বিনাশ হয়নি এমন বস্তু এই জগতে নেই। তাই কালের সঙ্গে কালীর সম্পর্ক চিরন্তন চিরসত্য এবং চির মাধুর্যময়। এই কালকে শাসন ও নিয়ন্ত্রণ করেন যিনি সেই কালিকা দেখতে ভয়ঙ্কর হলেও তিনি আমাদের কাছে অত্যন্ত কাছের, অতি আপন, আমাদের ভালোবাসার ও শ্রদ্ধার জগতের মঙ্গলময়ী মা। দশমহাবিদ্যার প্রথম রূপ কালী স্বয়ং ব্রহ্মশক্তি। স্বয়ং মহাকাল শিব মায়ের পদতলে বিরাজ করছেন। তিনি সব রূপে নির্গুণ। পরমসত্তা তাঁর উপর দণ্ডায়মান। জগতের স্থিতি সৃষ্টি প্রলয়ের কর্তৃ চৈতন্য রূপী কালী। এই কালী আবার জীবের কর্মফল দানকারী। কর্মফল অনুযায়ী ভালো-মন্দ ফল দান করেন। মহাকালী একধারে ভয়ংকরী, অন্যদিকে অপার করুণাময়ী। মায়ের কাছে শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রেম বিবেক বৈরাগ্য প্রার্থনা করতে হয়। এই এই দেবী কালিকার বিভিন্ন নাম। কোথাও নিত্যকালী, কোথাও মহাকালী, কোথাও ভদ্রকালী, কোথাও শ্যামাকালী, কোথাও রক্ষাকালী, কোথাও সিদ্ধেশ্বরী কালী, কোথাও শ্মশানকালী, কোথাও রটন্তীকালী, আবার কোথাও ফলহারিনী কালী। বিভিন্ন নামে তিনি পূজিতা হন। জৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে ফলহারিনী কালী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। ব্রহ্মময়ী কালী একদিকে যেমন সৃষ্টি স্থিতি বিনাশ করছেন, সমস্ত কিছু শক্তি, জ্ঞান, ইচ্ছা ও কর্ম শক্তিরূপে বিরাজিতা।

বাংলায় কালীপুজোর চল সারা বছর ধরেই দেখা যায়। দুর্গাপুজোর পরে যে কালীপুজো হয় তা জনপ্রিয় দীপান্বিতা কালী পুজো নামে পরিচিত। এছাড়াও রয়েছে রক্ষাকালী পুজো। স্থানীয়ভাবেও বাংলার নানা প্রান্তে কালীপুজো হয়। কোনও কোনও গৃহস্থের বাড়িতেও কালী পুজো বছরের বিশেষ সময়ে দেখা যায়। জৈষ্ঠ্য মাসের অমাবস্যা তিথিতে যে কালীপুজো হয় তা ফলহারিণী কালীপুজো (Falharini Kali Puja) নামে প্রসিদ্ধ। ভক্তদের বিশ্বাস, মা কালী জীবের কর্মফল অনুসারে তাদের আশীর্বাদ প্রদান করেন। তিনি প্রসন্না হলে জীবের দুঃখ দুর্দশা থেকে মুক্তি মেলে। পাশাপাশি জীবন সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধিতে ভরে ওঠে। জানা যায়, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ফলহারিণী কালীপুজোর দিনে সারদা দেবীকে পুজো করেছিলেন জগত কল্যাণের জন্য। ১২৮০ বঙ্গাব্দের জৈষ্ঠ্য মাসের অমাবস্যা তিথিতে ঠাকুর দক্ষিণেশ্বরে ষোড়শী রূপে পূজা করেছিলেন সারদা মা’কে। পরবর্তীতে এই সময়ের কালী পুজো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে ফলহারিণী কালী (Falharini Kali Puja) পুজো নামেই প্রসিদ্ধি পায়।

কেন এই পুজো ফলহারিণী কালীপুজো (Falharini Kali Puja) নামে পরিচিত

শাস্ত্র বিশেষজ্ঞদের মতে, জৈষ্ঠ্য মাসে আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল সমেত নানারকম মরসুমী ফল পাওয়া যায়। ভক্তরা তাদের ইষ্ট দেবীকে এই ফল নিবেদন করে থাকেন। দেবী ভক্তদের কর্মফল হরণ করে তাদেরকে মোক্ষফল প্রদান করেন। ভক্তদের বিশ্বাস, ফলহারিণী কালীপুজো করলে বিদ্যা, কর্ম এবং অর্থ ভাগ্যের উন্নতি ঘটে প্রেম প্রণয়ের বাধা দূর হয়, দাম্পত্য সংসারী জীবনেও সুখ শান্তি বিরাজ করে। এককথায় এই বিশেষ পুজোয় ভক্তরা আধ্যাত্মিক, নৈতিক, মানসিক শক্তি পেয়ে থাকেন বলে তাদের বিশ্বাস।

ফলহারিণী কালী অমাবস্যার ইতিহাস

প্রাচীনদের মতে, ফলহারিণী কালী পূজা শ্রী রামকৃষ্ণের সাথে সম্পর্কিত। এই দিনে শ্রী রামকৃষ্ণ তাঁর আধ্যাত্মিক অনুশীলনের সমস্ত মঙ্গল তাঁর সহধর্মিণী শ্রী সারদা দেবীর চরণে উপস্থাপন করেছিলেন। কোন পুরুষই তার স্ত্রীকে এতটা গুরুত্ব দেয়নি যে সে তার আধ্যাত্মিক অনুশীলনগুলিকে তার কাছে উৎসর্গ করেছে। ফলহারিণী আমাদের খারাপ কর্মের ফল হরণকারী। যখনই আমরা কিছু করি তা প্রবণতা আকারে একটি ফল তৈরি করে এবং ফলটি আমাদের অন্য একটি ক্রিয়া করতে পরিচালিত করে। যে ব্যক্তি মনে করে ‘আমি কর্তা এবং আমিই ভোগকারী’ সে তার খারাপ কর্মের ফল পেতে থাকে। আধ্যাত্মিক জীবনের লক্ষ্য এই চিন্তা দূর করা। 

ফলহারিণী কালী অমাবস্যার গুরুত্ব

সমস্ত জীবই তাদের কর্মের কারণে এখানে রয়েছে। যখনই একজন ব্যক্তি ভালো কিছু শোনে বা করে তা তাদের মনে ভালো ছাপ ফেলে। এবং তাদের ভাল কাজগুলি তাদের আরও একটি ভাল কাজ করতে বাধ্য করবে এবং চক্রটি চলতে থাকে যতক্ষণ না ব্যক্তি বুঝতে পারে যে সে কর্তা নয়। মা কালীকে প্রধানত ফলহারিণী কালী পূজার প্রেক্ষাপটে বলা হয় কারণ তিনি সকল মানুষের জীবনের সমস্ত কর্ম ও সংস্কারকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখেন। লোকেরা এই দিনে মা কালীর আরাধনা করে ইচ্ছা পূরণ এবং প্রচেষ্টায় সাফল্যের জন্য।

ফলহারিণী কালী অমাবস্যার আচার ও তিথি

ফলহারিণী কালী অমাবস্যা বাংলা ক্যালেন্ডারের জ্যৈষ্ঠ মাসে পড়ে। ফলহারিণী কালী পূজা 2024 এর তারিখ 5 জুন। দিনটি জৈষ্ঠো মাসে অমাবস্যার দিনে পড়ে। এই দিনে, বাংলা এবং দেশের অন্যান্য পূর্বাঞ্চলে বিস্তৃত পূজা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বিখ্যাত দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরে ফলহারিণী কালী পূজা রাত 9.00 টায় শুরু হয় এবং 1.00 টা

তিথি শুরু হওয়ার পর পর্যন্ত চলে: 07:54 PM, জুন 05
তিথি শেষ: 06:07 PM, জুন 06

মঙ্গলের রক্ষক এবং মন্দের বিনাশকারী মা কালী এই দিনে মন্দিরে এবং বাড়িতে পূজারীদের দ্বারা পূজা করা হয়। এই দিনে সম্পাদিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আচারগুলির মধ্যে রয়েছে কালী নাম সংকীর্তন, অঞ্জলি, আরতি এবং ভোগ। অমাবস্যার দিন রাতে আচার শুরু হয় এবং পরের দিন ভোর ৩টা পর্যন্ত চলে। বলা হয় যে এই দিনে মা কালীকে ফল, বিশেষ করে আম উপহার দেওয়া উচিত। আখ এবং কুমড়োও মা কালীর কাছে প্রস্তাবিত। পুজোয় চালকুমার নামে এক বিশেষ ধরনের কুমড়ো ব্যবহার করা হয়। এই শুভ দিনে, অনুগামীরা একটি উপবাসও পালন করে এবং বিশেষ নিরামিষ খাবার এবং মিষ্টি তৈরি করে, যা দেবীকে প্রস্তাব করা হয় এবং তারপর প্রসাদ হিসাবে অনুগামীদের দেওয়া হয়। এই দিনে কিছু লোক দেবীকে প্রসাদ দেওয়ার জন্য মন্দিরে যান এবং রাতের পূজায় অংশ না নিয়ে চলে যান, এটি ভুল বলা হয় যে কমপক্ষে আধা ঘন্টা পূজায় উপস্থিত হওয়া উচিত।

বাঙালি জীবনে ফলহারিণী কালী পুজোর তাৎপর্য লুকিয়ে রয়েছে শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনে। রামকৃষ্ণ এই দিনেই স্ত্রী সারদা দেবীকে পুজো করেছিলেন জগৎ কল্যাণের জন্য। ১২৮০ বঙ্গাব্দে জ্যৈষ্ঠ মাসের অমাবস্যা তিথিতে তিনি দক্ষিণেশ্বরে আদ্যাশক্তি সগুণরূপের পুজো করেছিলেন। তিনি ফলহারিণী কালী পুজোর দিন শ্রীমা সারদাকে ষোড়শীরূপে পুজো করেছিলেন বলে আজও রামকৃষ্ণমঠ ও আশ্রমে এই পুজো ‘ষোড়শী’ পুজো নামে পরিচিত। শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর মোক্ষপ্রাপ্তির জন্য এই নিয়মে পুজো করলেও এই দিনটিতে হিন্দু ধর্মাবলাম্বী মানুষ নানাবিধ ফল দিয়ে কালীর পুজো করে থাকেন।

জ্যৈষ্ঠমাসে আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল ইত্যাদি নানারকম ফলের মরসুমি ফল পাওয়া যায়। সাধক তাঁর ইষ্টদেবীকে বিভিন্ন ফল দিয়ে প্রসাদ নিবেদন করে থাকেন। শাস্ত্রে বলা হয়, জীবনেয সর্বস্ব। অর্থাৎ একদিকে ফলহারিণী যা সাধকের কর্মফল হরণ করেন। অপর দিকে কর্মফল হরণ করে সাধককে তাঁর অভীষ্টফল, মোক্ষফল প্রদান করেন। মহামারী, অনাবৃষ্টি বা বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে মানুষ রক্ষাকালী পুজো করে। কার্তিক মাসে দক্ষিণাকালীর পুজোয় সকলের সার্বিক কল্যাণ হয়। আর ফলহারিণী কালীপুজো করলে আমাদের প্রত্যেকের বিদ্যা, কর্ম ও অর্থভাগ্যের উন্নতি ঘটে। প্রেম-প্রণয়ে বাধা দূর হয়। দাম্পত্য সাংসারিক জীবনেও সুখশান্তি লাভ হয়।

ফলহারিণী কালী কথাটি এসেছে যিনি আমাদের কর্মফল হরণ করেন এবং মোক্ষ দান করেন। কর্মফল হরণ করে তিনি আমাদের মুক্তি দেন। আমাদের জীবনের সমস্ত বিপদ, দুঃখ, দৈন্য, ব্যাধি ও সর্ব অশুভ শক্তির বিনাশ করেন তিনি। ঐশ্বর্য্য, আরোগ্য, বল, পুষ্টি, কীর্তি, বংশগৌরব মুখ্য সবই প্রদান করেন। এক কথায় পরম প্রাপ্তি ও পরমাত্মা দুটোই লাভ করা যায়। এই ফলহারিণী কালী পুজোয় সাধকের মনে আধ্যাত্ম্য চেতনার দ্রুত বিকাশ ঘটে। ১৮৭৩ সালে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Sri Ramkrishna ) মা সারদা দেবীকে (Maa Sarada) ষোড়শী রূপে পূজা করেন। রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন শাখায় এই দিনটি ধুমধাম করে পালন করা হয়। দশমহাবিদ্যার (Das Mahavidya) যে দশটি রূপ কালী, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, বগলা, ধূমাবতী, মাতঙ্গী, কমলা – ষোড়শীর রূপটি সেই আদিশক্তি মহামায়ার রূপ। এই দিন রামকৃষ্ণদেব সারদাদেবীকে বিদ্যা এবং শ্রীবিদ্যাদাতৃরূপে পূজা করেন।

২০২৪ সালের ফলহারিণী আমাবস্যা সময় হচ্ছে এই বছর ফলহারিণী কালীপুজো হবে আগামী ৫ জুন ২০২৪ বুধবার। অমাবস্যা তিথি শুরু হবে ৫ জুন সন্ধে ৭টা ১৫ মিনিটে। অমাবস্যা চলবে ৬ জুন বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা ৫৩ মিনিটে। উদয়া তিথি অনুসারে অমাবস্যা তিথি ধরা হবে ৬ জুনকেই। তবে যেহেতু কালীপুজো রাতে হয়, তাই ৫ জুন রাতে অমাবস্যা পড়ে গেলেই শুরু হবে ফলহারিণী কালীপুজো। বুধবার ১৬টি কলা ও ৫টি ফল, ফুল, ক্ষীরের মিষ্টি, বস্ত্র, দক্ষিণা-সহ সহ কোনও কালী মন্দিরে পুজো দেওয়া উচিত। মনের যে কোনও একটি ইচ্ছা পূরণ করতে মা কালীর চরণে একটি ফল দিন আর সারা বছর ওই ফলটি খাবেন না। এছাড়াও মা কালীর মন্দিরে পাঁচটি ফল দিন। মাতৃস্থানীয়া কোনও মহিলাকে পাঁচটি ফল দিন আর প্রণাম করে আশীর্বাদ নিন। আর্থিক কষ্ট দূর করার জন্য মা কালীর মন্দিরে ক্ষীর দিয়ে পুজো দিন। ক্ষীরের অভাবে ক্ষীরের প্যারা দিয়েও পুজো দিতে পারেন। মনে রাখতে হবে, কালী নারীশক্তির প্রতীক। তাই নারী জাতির প্রতি কুদৃষ্টি রাখে যারা বা নারী জাতিকে অবজ্ঞার চোখে দেখে যারা, তারা কালীর পুজো করলেও কোনও ফল পাবে না।পাশাপাশি একটি সরষের তেলের প্রদীপ জ্বেলে দিতে ভুলবেন না কিন্তু।

collected

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *