পুরাণ শব্দের অর্থ হল প্রাচীন কথা। শাস্ত্রে আছে -“যস্মাৎ পুরাহি আসীৎ ইদং তৎ পুরাণম্” অর্থাৎ ,যেখানে প্রাচীন কথা বর্ণিত হয়েছে তাই পুরাণ। পুরাকালের সৃষ্টি, ধর্ম, আচার, ধর্ম, প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনার সংকলনকে সাধারন ভাষায় পুরাণ বলে। পুরানকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় – মহাপুরান ও উপপুরান। আদতে মহাপুরাণকেই প্রকৃত পুরান বলা হয়। ১৮টি মহাপুরান আছে। যথা – ব্রহ্ম, ২)পদ্ম, ৩) বিষ্ণু, ৪) শিব, ৫) ভাগবত, ৬) নারদীয়, ৭) মার্কন্ডেয়,৮) অগ্নি, ৯) ভবিষ্য, ১০) ব্রহ্মবৈবর্ত, ১১) লিঙ্গ, ১২) বরাহ, ১৩) স্কন্দ, ১৪) বামন,১৫) কূর্ম, ১৬) মৎস্য, ১৭) গরুড় এবং ১৮) ব্রহ্মান্ড।
ব্যাসদেব বলেছেন পুরানের অবশ্যই ৫টি বৈশিষ্ট্য থাকবে। যেমন –
*সর্গ – প্রথম সৃষ্টি।
*প্রতিসর্গ – সৃষ্টির পর আবার সৃষ্টি।
*বংশ – দেবতা ও ঋষিদের বংশপরিচয়।
*মন্বন্তর – মনুদের রাজত্বকাল এবং
*বংশানুচরিত – বিভিন্ন প্রাচীন রাজাদের বংশাবলীর পরিচয়।
পুরাণের বৈশিষ্ট্য হলো – পুরানগুলি সৃষ্টি, প্রলয়ের পর নতুন সৃষ্টি, ঋষি ও দেবগনের বংশাবলী, মনুদের রাজত্বকাল এবং প্রাচীন রাজবংশাবলীর ইতিহাস নিয়ে রচিত হয়েছিল। এছাড়াও দানধর্মবিধি, শ্রাদ্ধকল্প, বর্ণাশ্রমবিভাগ, ইষ্টাপূর্ত ও দেবপ্রতিষ্টা প্রভৃতি বিষয়গুলির কথাও পুরাণগুলিতে আলোচিত হয়েছে। ভূগোল, পদার্থবিদ্যা, জ্যোতিষ, শারীরবিদ্যা, ব্যাকরণ, চিকিৎসাশাস্ত্র, অস্ত্রবিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ের আলোচনাও পুরাণগুলিতে স্থান পেয়েছে। পুরাণগুলিতে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর-এই তিনজন দেবতার উপসনাই প্রাধান্য পেয়েছে। পুরানগুলির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল- এক একটি পুরাণে একটি বিশেষ দেবতার উপস্থিতি দেখা যায়। কোনো কোনো পুরাণে দর্শন, অলংকার, ব্যাকরণ, ছন্দ ও ধর্মশাস্ত্র প্রভৃতি বিষয়গুলি নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।