নবদুর্গা আর্থাৎ দেবি দুর্গার ৯টি রূপ। সেই ৯টি রূপেই দেবি দুর্গাকে পুজো করা হয়। আবার তাঁরই কন্যা ধন-সম্পদ ও ঐশ্বর্যের দেবী লক্ষ্মী। শাস্ত্র মতে তাঁরও রয়েছে আটটি রূপ। তাঁকে আট রূপে পূজার অর্ঘ্য দেওয়া হয়। সেই আট রূপ হলো –
১) আদি লক্ষ্মী – শাস্ত্র মতে দেবী লক্ষ্মীর পুরনো ও প্রধান রূপ হল আদি লক্ষ্মী। মহালক্ষ্মীর এই রূপ শ্রী ও ভার্গবী নামেও পরিচিত। নারায়ণের পাশে সর্বদা এই রূপেই দেখা যায় তাঁকে।
২) ধনলক্ষ্মী – একবার অর্থের গুরুত্ব নিয়ে মত পার্থক্যের জেরে বৈকুন্ঠ ত্যাগ করে মনুষ্য রূপে মর্ত্যে চলে আসেন লক্ষ্মী দেবী। এরপরেই দারিদ্র কাঠুরের রূপে পৃথিবীতে আসেন নারায়ণও।
৩) গজলক্ষ্মী – নারায়ণের ভক্ত ছিলেন এক বিশালাকার হাতি গজেন্দ্র ও দেবী লক্ষ্মী। নারায়নের আদেশেই দু’জনে একত্রে নারায়ণের আরাধনা শুরু করেন। দেবীর চার হাত দুই হাত থাকে অভয় ও বরদা মুদ্রায়।
৪) সন্তানলক্ষ্মী – এই রূপে দেবী ষড়ভূজা। এক শিশুকে কোলে নিয়ে দেবী বিরাজ করেন পদ্মাসনে। দেবীর দুই হাত থাকে অভয় মুদ্রা ও বরদা মুদ্রায়।
৫) বীরলক্ষ্মী – এই রূপ ধৈর্যলক্ষ্মী নামেও পরিচিত। কথিত ভোজরাজ্যের রাজা ভোজ ছিলেন অষ্ট লক্ষ্মীর পূজারি। শৌর্য ও বীরত্বের প্রতীক দেবীর হাতে রয়েছে শাঁখ, চক্র, ধনুক, তির, ত্রিশূল ও সোনার ফলক। বাকি দুই হাত থাকে অভয় ও বরদা মুদ্রায়।
৬) বিজয়লক্ষ্মী – কথিত, এক দরিদ্র ব্যক্তি ছিলেন দেবী লক্ষ্মীর একনিষ্ঠ ভক্ত। তাঁর নিষ্ঠা দেখে তুষ্ট দেবী দর্শন দিয়েছিলেন। কথিত আছে, তিনি কঠোরভাবে শুরু করেছিলেন লক্ষ্মীর তপস্যা। ত্যাগ করেছিলেন আহার ও নিদ্রা। বিচলিত লক্ষ্মী তখন ভক্তের কুটিরে উজাড় করে দিয়েছিলেন তাঁর ধনসম্পদ। কিন্তু সেই দরিদ্র ভক্ত ততদিনে জয় করেছিলেন নিজের কামনা ও বাসনা। তাঁর কাছে অর্থ সম্পদ হয়ে উঠেছিল মূল্যহীন। তাই দেবী লক্ষ্মীর দেওয়া সম্পদ দিয়ে তিনি নির্মাণ করেছিলেন বিজয়নগর রাজ্য।
৭) বিদ্যালক্ষ্মী – পদ্মাসনা, শুভ্রবস্ত্র পরিহিতা, শ্বেতবর্ণা দেবী বিদ্যালক্ষ্মী জ্ঞানরূপ ধনপ্রদায়িনী। চতুর্ভুজা দেবীর দুটি হাতে থাকে দুটি পদ্ম। অন্য দুই হাত অভয় ও বরদা মুদ্রায়। দেবী বিদ্যালক্ষ্মী বৈষয়িক সুখ ও সমৃদ্ধির দেবী নন। তিনি জ্ঞান, বুদ্ধি ও আত্মিক সমৃদ্ধির দেবী। তিনি ভক্তের সুপ্ত প্রতিভা জাগ্রত করেন।
৮) ধান্যলক্ষ্মী – কথিত অজ্ঞাতবাসে পাণ্ডবরা এক বার ঘন অরণ্যে অনেক খুঁজেও খাবার জোগার করতে পারেননি। পাণ্ডবদের অসহায় অবস্থা দেখে বিচলিত হয়ে, দেখা দিয়ে পাণ্ডবদের হাতে আহার্য্য বস্তু পূর্ণ একটি পাত্র তুলে দিয়েছিলেন দেবী। ওই পাত্রের বিশেষত্ব ছিল, খালি হয়ে গেলে নিজে থেকেই আবার ভরে উঠত। এই ভাবেই ক্ষুধার্ত ভক্তদের রক্ষা করেন দেবী ধান্যলক্ষ্মী।