গঙ্গাসাগরে শুরু হয়ে গেছে মকর স্নান। লক্ষ লক্ষ মানুষ ১৪ ও ১৫ তারিখ পুণ্যস্নান কপিল মুনির আশ্রমে পুজো দেন। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষেরা পৌষ সংক্রান্তিতে আসেন পুজো দিতে। কিন্তু কেন এই দিনটি এতোই গুরুত্বপূর্ণ? সেই নিয়ে আছে ভারতীয় পুরানের এক কাহিনী।
সত্যযুগে অযোধ্যার রাজা ছিলেন সাগর। মনে কর হয় এই সাগর রাজা ত্রেটা যুগে ভগবান বিষ্ণুর সপ্তম অবতার শ্রীরামচন্দ্রের ত্রয়োদশ পূর্বপুরুষ ছিলেন। রাজা সাগর নিজের সাম্রাজ্য বিস্তার করার জন্য ৯৯ বার অশ্বমেধ যজ্ঞ করেছিলেন। আরও একবার অর্থাৎ ১০০তম অশ্বমেধের যজ্ঞ শুরু করেন। এদিকে ১০০ তম অশ্বমেধ শুরু করতেই রুষ্ট এবং ভীত হন দেবরাজ ইন্দ্র। এর আগে একমাত্র দেবরাজ ইন্দ্রই ১০০ বার অশ্বমেধের যজ্ঞ করেছিলেন। একজন মনুষ্য হয়ে সেই সাহস দেখানোয় রুষ্ট হন দেবরাজ। ফলে তিনি ছল করে সেই যজ্ঞ বন্ধ করার চেষ্টা করতে থাকেন।
পুরানের কাহিনী অনুযায়ী, ইন্দ্রদেব সেই ঘোড়া চুরি করে কপিল মুনির আশ্রমে রেখে লুকিয়ে রেখে দিলেন এদিকে ঘোড়ার খোঁজ না পেয়ে দলবল, অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে ঘোড়া খুঁজতে বেরোলো সাগর রাজার ষাট হাজার পুত্র। অবশেষে খোঁজ মিলল ঘোড়ার। কপিল মুনির আশ্রমে হদিস পাওয়া গেল অশ্বমেধের ঘোড়ার। কপিল মুনির আশ্রমে ঘোড়াকে দেখে সবাই ভাবল কপিল মুনিই বোধহয় সেই ঘোড়াকে এখানে এনেছেন। এদিকে কপিল মুনি তখন ধ্যান মগ্ন। কিন্তু সে সবের তোয়াক্কা না করেই কপিল মুনিকে আক্রমণ করে বসে সাগর রাজার ছেলেরা। কপিল বিরক্ত হয়ে তাঁর চোখ খুলতেই সেই তেজ এবং ক্রোধের আগুনে নিমেষে জ্বলে পুড়ে খাঁক হয়ে যায় ষাট হাজার পুত্র। এদিকে পুত্রদের মৃত্যু সংবাদ পেয়েই কপিল মুনির কাছে ছুটে আসেন রাজা সাগর।
সাগর রাজের আর্জি শুনে কপিল মুনি বলেন একমাত্র গঙ্গার পবিত্র জলে তাঁর পুত্রদের ভস্ম ধুয়ে গেলে তাঁদের মোক্ষ লাভ হবে।
এরপরে অনেক চেষ্টা করলেও সাগর রাজা গঙ্গাকে মর্ত্যে আনতে পারেননি। কেটে যায় আরও দুই প্রজন্ম। অবশেষে সাগর রাজার বংশধর ভগীরথ দেবতাদের তুষ্ট করে গঙ্গাকে মর্ত্যে আনতে রাজি করাতে সক্ষম হন। দেবী গঙ্গার পুণ্য জলের স্পর্শ পেয়েই পাপ মুক্ত হয় ষাট হাজার পুত্রের। দুই প্রজন্ম ধরে আটকে থাকা পুত্ররা মোক্ষ লাভ করেন। সেই থেকেই কথিত কপিল মুনির আশ্রমের সামনে মকর সংক্রান্তির দিনে গঙ্গাস্নান করলে মানুষ মোক্ষ লাভ করে।