ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় উৎসব নাগপঞ্চমী। এই একই দিনে বাংলায় মনসা পুজো করা হয়। এমনকী এই একই দিনে নেপালেও পালিত হয় নাগপঞ্চমী। এই বছর সারা দেশ জুড়ে আগামী ২ অগস্ট ধুমধাম করে পালিত হচ্ছে নাগপঞ্চমী। এই নাগপঞ্চমী (Nag Panchami) পালনের পিছনে বেশ কিছু পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে।
সনাতন ধর্মে নাগপঞ্চমীকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। এই বিশেষ দিনে সাধারণত মহিলারা ভগবান শিবের (Siva) অলঙ্কার ও গর্ব নাগদেবের পূজা করে থাকেন। এদিন নাগদেবতাকে তুষ্ট করার জন্য নানা প্রতিকার মেনে চলেন। জ্যোতিষশাস্ত্র (Astrology) অনুসারে, যাঁদের কুণ্ডলীতে সর্পদোষ (Sarpa Dosh) রয়েছে, তাঁরাও এ দিনে বিশেষ ব্যবস্থা করে সর্পদোষ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব বলে মনে করা হয়। হিন্দু ক্যালেন্ডার (Hindu Panchang) অনুসারে, প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমীতে এই উৎসব পালিত হয়। চলতি বছরে ২২ অগস্ট, সোমবার হলে নাগদেবতার বিশেষ পুজো। হিন্দুদের বিশ্বাস অনুসারে, এদিন রীতি-নীতি মেনে উপাসনা করলে ধন, সুস্বাস্থ্য এবং জীবনে ইতিবাচক শক্তির (Spirituality) প্রবেশ ঘটে।
শুভ সময়
নাগ পঞ্চমী তিথি ২১ অগস্ট দুপুর ১২টা ২০মিনিটে শুরু হবে। তিথি শেষ হবে ২২ অগস্ট, মঙ্গলবার দুপুর ২ মিনিটে। তবে এই উৎসব পালিত হবে শুধুমাত্র ২১ অগস্ট। ২১ অগস্ট পুজোর শুভ মুহুর্ত সোমবার সকাল ৫ টা ৫৩ মিমিট থেকে শুরু করে সকাল ৮.৩০ মিনিট পর্যন্ত। এই শুভ সময়ে সর্প দেবতার পুজো করলে ভালো ফল পাওয়া যায় বলে মনে করা হয়।
হিন্দু পৌরাণিক (Hindu Mythology) কাহিনী অনুসারে, হিন্দু দেবতা কৃষ্ণ যমুনা নদীর ধারে একবার খেলছিলেন। তখন তিনি বেশ ছোট ছিলেন এবং তাঁর বল নদীর ধারে একটি গাছের ডালে আটকে যায়। বল উদ্ধারের জন্য কৃষ্ণ নদীতে পড়ে যান এবং একটি কলিঙ্গ নামক সাপ তাঁকে ঘিরে ধরে। নিজেকে বাঁচানোর জন্য কৃষ্ণ কঠিন লড়াই করেন। তখন সাপ বুঝতে পারে যে কৃষ্ণ কোনও সাধারণ শিশু নয় এবং সে কৃষ্ণকে অনুরোধ করে তাকে হত্যা না করার জন্য। কৃষ্ণ প্রতিশ্রুতি নিয়ে সাপকে রক্ষা করেছিলেন যাতে ওই সাপের জন্য যাতে সাধারণ মানুষ সমস্যায় না পড়ে। নাগ পঞ্চমী কৃষ্ণের বিজয়কে চিহ্নিত করতে উদযাপিত হয়।
মহারাষ্ট্রে, একটি থালায় একটি সুপ্ত কোবরা নিয়ে এবং মানুষের দরজা দরজায় গিয়ে ভিক্ষা ও পোশাক চাওয়ার মাধ্যমে এই উৎসব উদযাপন করা হয়। অন্যদিকে, কেরলে ভক্তরা সাপের মন্দিরে যান এবং সাপের একটি পাথর বা মূর্তি পুজো করেন। নাগদেবতা আরাধনা করা হয় যাতে সকলে সাপের কামড় থেকে রক্ষা পায়। অনেক জায়গায় কাদা ও বালির তৈরি সাপের মূর্তিও পুজো করা হয়। গরুর দুধ, ধান এবং দূর্বাও নিবেদন করা হয়। এটা বিশ্বাস করা হয় যে শিব, অন্য হিন্দু দেবতা, সাপকে ভালোবাসেন এবং আশীর্বাদ করেন, তাই ভক্তরা তাকে খুশি করার চেষ্টায় সাপের পূজা করে।
নাগপঞ্চমীকে আরেকটি পৌরাণিক কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। এখানেও কৃষ্ণের সঙ্গে জড়িত রয়েছে সাপের গল্প। কৃষ্ণের (Sri Krishna) লীলার সময় কলিঙ্গ নামের একটি সাপ যমুনা নদীতে বাস করত। ওই সাপের ভয়ে ব্রজের বাসিন্দারা কেউ নদীতে নামতে পারতেন না। ওই নদীর জলও ব্যবহার করতেন না কেউ। পাশাপাশি ওই সাপের বিষে নদীর জলও বিষাক্ত হয়ে গিয়েছিল। সাধারণ মানুষকে বাঁচানোর উদ্দেশে কৃষ্ণ ও ভয়ানক বিষাধর সাপের সঙ্গে যুদ্ধ করে। এবং পুনরায় ওই নদীকে বিষমুক্ত করে তোলে। এই কারণে নাগপঞ্চমী পালন করা হয়।
নাগ পঞ্চমী কবে পালিত হবে?
বাংলা পঞ্জিকা মতে, ১৮ জুলাই ও ২১ অগস্ট, দুই দিন ধরেই এই বছরের নাগ পঞ্চমীর দিন নির্ধারিত হয়েছে। প্রতি চান্দ্রমাসে দুইবার করে পঞ্চমী তিথি পালিত হয়। আর এই পঞ্চমী তিথির অধিদেবতা হলেন নাগরাজ। এ বছর নাগ পঞ্চমী পালিত হবে ২১ অগস্ট, সোমবার। শ্রাবণ মাসের সোমবার ও নাগ পঞ্চমী, একসঙ্গেই পালিত হবে এবার। অর্থাত্ শ্রাবণ সোমবারের পাশাপাশি এ দিনে মহাদেবের প্রিয় সর্পেরও পুজো করা হয়। নাগ পঞ্চমীর দিনে সাপ দেখা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। উভয়কে দুধও দেওয়া হয়। বিশ্বাস করা হয় যে নাগ পঞ্চমীতে সর্প দেবতার পুজো করলে সুখ ও সৌভাগ্যের পাশাপাশি ধন-সম্পদও বৃদ্ধি পায়।
নাগ পঞ্চমীর ধর্মীয় তাৎপর্য
মহাদেবের গলায় অলঙ্কার হিসেবে সর্পদেবতাকে দেখা যায়। শ্রাবণ মাসে নাগ পঞ্চমী তিথিতে সর্প দেবতাকে ভগবান শিবের গলার অলংকার বলে মনে করা হয়। নাগ পঞ্চমীর দিন নাগরাজ ও মহাদেবকে পুজো করলে জীবনে সুখ ও শান্তি বয়ে নিয়ে আসে। বিশ্বাস করা হয় যে নাগ পঞ্চমীর দিন সর্পদেবতাকে দুধ নিবেদন করলে শুভ ফল পাওয়া যায়। এই শুভক্ষণে পূজা করলে সর্পকূলের উপদ্রব থেকেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
প্রাচীন কালে এই সময় সাপেদের বাড়বাড়ন্ত আটকাতেই এই নাগপঞ্চমী পুজো কদর ছিল। সর্পকূলের বিনাস ও দেবী মনসার আশীর্বাদ পেতে এদিন ধুমধাম করে নাগরাজের পুজো করা হত। সেই রীতি এখনও অব্যাহত। গ্রামেগঞ্জে নাগ পঞ্চমীর দিন উপবাস ও রীতি মেনে পুজো করার রয়েছে।
নাগ পঞ্চমীর দিন যে কাজগুলি ভুলেও করবেন না…
কাউকে খারাপ কথা বলবেন না
শাস্ত্র অনুসারে, নাগ পঞ্চমীতে কাউকে কখনও ভুল বা মিথ্যে কথা বলা উচিত নয়। এমনটা করা সত্যিই অন্যায় বলে মনে করা হয়। সমাজে পরিবারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। বিশ্বাস করা হয় যে নাগ পঞ্চমীর দিন কোনও ধরনের ধারালো বা সূক্ষ্ম বস্তু ব্যবহার করা উচিত নয়। বিশেষ করে এই দিনে সুঁচ ও সুতো ব্যবহার করা খুবই অশুভ বলে মনে করা হয়।
এই পাত্র ব্যবহার করবেন না
নাগ পঞ্চমীতে উনুনে খাবার রান্না করার সময় লোহার প্যান ও কড়াই ব্যবহার করা উচিত নয়। কথিত আছে, এই কাজ করলে সর্পদেবতা অত্যন্ত ক্ুদ্ধ হোন। নাগ পঞ্চমীর দিন ক্ষেত চাষ করা বা জমি খনন করা নিষিদ্ধ। এই বিশেষ দিনে শাক তোলাও নিষেধ। তাই এদিনে এমন কাজ না করাই ভালো।
(Collected)