আজ নবরাত্রির দ্বিতীয় দিন। এই দিনে দেবীর দ্বিতীয় রূপ মা ব্রহ্মচারিণীর পূজা করা হয়। সঠিক নিয়ম মেনে মা ব্রহ্মচারিণীর (Maa Brahmacharini) পূজা করলে সব ইচ্ছা পূরণ হয় এবং বিশেষ ফল পাওয়া যায়। দেবীর এই রুপে এক হাতে মালা এবং অন্য হাতে কমণ্ডলু ধারণ করেছেন। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এটি মায়ের অবিবাহিত রূপ। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, দেবী পার্বতী ভগবান শিবকে স্বামী হিসেবে পেতে ব্রহ্মচারী হয়ে কয়েক হাজার বছর ধরে কঠোর তপস্যা করেছিলেন। মায়ের এই তপস্যার কারণে তাঁর নাম রাখা হয় ব্রহ্মচারিণী।
হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, এবছর ২৭ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথি পড়েছে। নবরাত্রির সময় মা দুর্গার বিভিন্ন রূপের পূজা করা হয়। দ্বিতীয় দিনে মা ব্রহ্মচারিণীর পূজা করা হয়। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক মা ব্রহ্মচারিণীর পূজা পদ্ধতি, মন্ত্র এবং ব্রত কথা সম্পর্কে। (Spiritual)।
মা ব্রহ্মচারিণী পূজা বিধি
সকালে সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠুন, স্নান করে পরিষ্কার কাপড় পরুন। মা ব্রহ্মচারিণীর পূজার আগে যথাযথভাবে কলশ দেবতা এবং ভগবান গণেশের পূজা করুন। এরপরে মা ব্রহ্মচারিণীর পূজা শুরু করুন। প্রথমে মাকে পঞ্চামৃত দিয়ে স্নান করান এবং তাকে ফুল, অক্ষত, কুমকুম, সিঁদুর, পান, সুপারি, মিষ্টি ইত্যাদি প্রদান করুন। তারপরে, মা ব্রহ্মচারিণীর ব্রত কথা পাঠ করুন। তারপর মায়ের আরতি করুন।
মা ব্রহ্মচারিনী পূজা মন্ত্র
ইয়া দেবী সর্বভূতেষু মা ব্রহ্মচারিণী রূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।
দধানা কর পদ্মভ্যাম অক্ষমালা কমণ্ডলু।
দেবী প্রসীদতু মে ব্রহ্মচারিণ্যনুত্তমা।
ওম দবী ব্রহ্মচারিণ্যৈ নমঃ।।
মা ব্রহ্মচারিণী ব্রতকথা
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, সতী রূপে যজ্ঞের আগুনে নিজেকে ভস্ম করার পর মাতা পর্বতরাজ হিমালয়ের কন্যা হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর নাম ছিল পার্বতী বা হেমাবতী। তিনি ভগবান শিবকে তাঁর স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন, তখন ব্রহ্মার মানস পুত্র নারদ তাঁকে কঠোর তপস্যা করার পরামর্শ দেন। নারদ মুনির কথা শুনে তিনি কঠোর তপস্যা করতে শুরু করেন, যার কারণে তাঁর নাম রাখা হয় ব্রহ্মচারিণী বা তপশ্চারিণী। কথিত আছে যে, এই তীব্র তপস্যার কারণে মা কেবল ফল-ফুল এবং বেল পাতা তিন হাজার বছর ধরে খেয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, এর পরে মা বেল পাতা খাওয়াও ছেড়ে দেন এবং হাজার বছর ধরে নির্জলা এবং অনাহারে থেকে তপস্যা করতে থাকেন।
কঠিন তপস্যার কারণে দেবীর দেহ দুর্বল হয়ে পড়েছিল। মায়ের কঠিন তপস্যা দেখে সমস্ত দেব-দেবী ও ঋষিরা তাঁর কাছে হাজির হন এবং বর দেন যে, তাঁর সমস্ত ইচ্ছা পূরণ হবে এবং ঠিক সেটাই ঘটেছিল।
তাৎপর্য
মা ব্রহ্মচারিনী প্রেম, আনুগত্য, প্রজ্ঞা, ধৈর্য ও জ্ঞানের প্রতীক। অতএব, যারা পরম ভক্তির সাথে তাঁর পূজা করে, তারা তাদের জীবনে সুখ-শান্তির আশীর্বাদ পায়। তিনি তাঁর ভক্তদের মনের ইচ্ছা পূর্ণ করেন। তাঁর পুজোর সময় জবা এবং পদ্মফুলও প্রদান করা হয়।
