ভারতের বহু মন্দিরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উৎসাহ, উদ্দীপিনা। তেমনই একটি বিখ্যাত মন্দির জলপাইগুড়ির শ্রী শ্রী পঞ্চমুখী হনুমান মন্দির। ১৯২৭ সালে এই মন্দিরটি গড়ে তোলেন বিহার থেকে আগত স্বামী শ্রীকরপাত্রীজি মহারাজ নামক এক নাঙ্গা সন্ন্যাসী।নেতাজির পরম ভক্ত এই সন্ন্যাসী (সাধু) কলা গাছের শুকনো খোলা নেঙটির মতো করে পড়ে হনুমানজির আরাধনা করতেন। তারই একান্ত আগ্রহে শৌর্যের প্রতীক সুভাষচন্দ্রের কাঠের মূর্তি স্থাপন করে প্রতিদিন তার পুজো করতে থাকেন। মন্দিরের ভেতরে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ছাড়া গান্ধীজীর প্রতিকৃতিও রয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধা ছিল। সেই জন্য মন্দিরে নেতাজির মূর্তিকে তিনি দেবতার আসনে স্থান দেন। জীবদ্দশাতে নেতাজীর উদ্দেশ্যে রোজ ভোগ নিবেদন করতেন। এই মন্দিরে গেল খুবই রোমাঞ্চ বোধ হয়। মনে হয় যেন এক টুকরো স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস যুক্ত এই মন্দিরের সঙ্গে।
মন্দিরের পূজা অর্চনার কাজে নিযুক্ত কর্মীদের মতে, দুপুরে নেতাজিকে অন্নভোগ, সন্ধ্যায় ফল ভোগ এবং রাতে দুধ অথবা ছানা দেওয়া হয়। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য নেতাজী ভক্তরা প্রায় প্রতিদিনই এই মন্দির দর্শন করতে আসেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ভারতবর্ষের কোনও মন্দিরেই নেতাজির নিত্য পূজা হয় না। একমাত্র জলপাইগুড়ি শহরের এই মন্দিরেই তার উল্লেখযোগ্য ব্যাতিক্রম। যদিও মন্দিরের প্রধান আরাধ্য দেবতা হলেন পঞ্চমুখী হনুমান। নিয়মিত সেখানে পূজিত হন বজরংবলী। মন্দিরের ভিতরে দেওয়াল জুড়ে অবস্থান করছেন রাধা-কৃষ্ণ, রাম-সীতা, হর-গৌরিসহ আরো অনেক দেবদেবী। মন্দিরের ভেতর নেতাজী সুভাষের মূর্তিটি ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী (কার্যকাল :১৯৪৮-১৯৬২) তথা পশ্চিম বাংলার রূপকার ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের মূর্তিও রয়েছে। নেতাজী সুভাষের মত তিনিও একই ভাবে ভক্তদের কাছে পূজিত হন।