ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে যখন মানুষের মনে আনন্দের রং ছড়িয়ে পড়ে, ঠিক তখন পালিত হয়, দোল উৎসব – যাকে বসন্ত উৎসবও বলে হয়। আজ, শুক্রবার সারা ভারত জুড়ে পালিত হচ্ছে দোল উৎসব। এই উৎসবের সূচনা বৃন্দাবনে মূলত কৃষ্ণ ও তাঁর সখীদের মধ্যে। আর রাধাকৃষ্ণ নাম উঠলে মথুরা-বৃন্দাবনের প্রসঙ্গ আসবে না তাও আবার হতে পারে? তাই এবারের হোলি উৎসব সকলের জন্য উদযাপন করা যাক মথুরা-বৃন্দাবনে। পৌরাণিক যুগ ও রামায়ণ-মহাভারতের জন্ম লগ্নে যে জায়গাটি হিন্দু ধর্মের কাছে শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমি হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করে, উত্তরপ্রদেশে অবস্থিত সেই বিখ্যাত শহরটির নাম মথুরা। মউজপুর, মধুপুরী, মধুবন, মধুরা, মদুরা বিভিন্ন সময়ে এই বিভিন্ন নাম বদলের মধ্যে দিয়ে আজ এই জায়গাটি হয়ে উঠেছে মথুরা। সমস্ত পৌরাণিক ঘটনার মধ্যেও মথুরার সবথেকে আকর্ষণের বিষয়বস্তু হল দোলযাত্রা। শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমিতে দোলযাত্রার মাহাত্ম্য যে অন্যরকম তা বলাই বাহুল্য।
রাধাকৃষ্ণের এই লীলাভূমিতে দোল পূর্ণিমা পালিত হয় প্রায় এক সপ্তাহ ধরে। এখানে বিভিন্ন পর্যায়ে অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে হোলি খেলা অনুষ্ঠিত হয় যেমন- ব্রজ কি হোলি, লাঠমার হোলি বৃন্দাবন প্রভৃতি। দোলযাত্রা শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগে থেকে প্রাক্-হোলি উৎসবে মেতে ওঠে মথুরাবাসী। সেই সময় এরা একটি বিশেষ লাঠি খেলা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন; যেখানে পুরুষেরা মহিলাদের গায়ে রং মাখানোর চেষ্টা করলে মহিলারা লাঠি দিয়ে নিজেদের রক্ষা করেন। সঙ্গে সঙ্গে মহিলারা মজা করে সেই সমস্ত পুরুষদের লাঠি দিয়ে প্রহার করতে থাকেন। এই সময় মহিলারা গোপিনীদের পোশাকে সেজে ওঠেন এবং পুরুষেরা গোপের পোশাক ধারণ করেন। প্রধানত এই উৎসবকে বলা হয় লাঠমার হোলি। মথুরা শহর থেকে প্রায় ৪২ কিলোমিটার দূরে রাধার জন্ম স্থান হিসেবে প্রসিদ্ধি বারসানা গ্রাম প্রধানত এই বিশেষ ধরনের হোলি খেলার জন্য বিখ্যাত। মহিলাদের হাতে লাঠির মার খাওয়া থেকে বাঁচার জন্য পুরুষেরা ঢাল ব্যবহার করে থাকেন। এ সময় তারা বিভিন্ন গানও গায়। শুধু তাই নয়, এই লাঠমার হোলির পরদিন বদলা বলে একটি পর্ব পালন করা হয়, যেখানে পুরুষেরা মহিলাদের গায়ের রং মাখিয়ে আগের দিনের লাঠির মারের প্রতিশোধ নেন।