www.machinnamasta.in

ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লী গং গণপতয়ে বর বরদ সর্বজনস্ময়ী বশমানয় ঠঃ ঠঃ

April 20, 2025 4:09 am

জন্মাষ্টমী ২০২৪ কবে- ২০২৪ সালের জন্মাষ্টমী তিথই পড়ছে ২৬ অগস্ট। দিনটি রয়েছে সোমবার। এমন তিথিতে শ্রীকৃষ্ণের আরাধনায় মাতবে বৃন্দাবন থেকে মথুরা। ব্রজভূমি থেকে শুরু করে মায়াপুর, দ্বারকায় সেদিন উৎসবে মাতবেন ভক্তরা। জন্মাষ্টমীর তিথি- জন্মাষ্টমীর তিথি ২৬ আগস্ট দুপুর ৩ টে ৩৯ মিনিটে শুরু হচ্ছে। আর সেই তিথি শেষ হবে ২৭ আগস্ট দুপুর ২ টো ১৯ মিনিটে। রোহিনী নক্ষত্র ২৬ আগস্ট দুপুর ৩ টে ৫৫ মিনিটে শুরু হবে। আর ২৭ আগস্ট সন্ধ্যা ৩ টে ৩৮ মিনিটে শেষ হবে।

জন্মাষ্টমী বা কৃষ্ণজন্মাষ্টমী একটি হিন্দু উৎসব। এটি বিষ্ণুর অবতার কৃষ্ণের জন্মদিন হিসেবে পালিত হয়। এর অপর নাম কৃষ্ণাষ্টমী, গোকুলাষ্টমী, অষ্টমী রোহিণী, শ্রীকৃষ্ণজয়ন্তী ইত্যাদি।

পুরাণ অনুসারে পাঁচ হাজার বছর আগে এই ধরাধামে অবতীর্ণ হন শ্রীবিষ্ণুর অষ্টম অবতার কৃষ্ণ। তাঁর আবির্ভাব তিথি প্রতি বছর জন্মাষ্টমী নামে পালিত হয়। কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ছাড়াও এই দিনটি গোকুলাষ্টমী নামেও পরিচিত। এই বছর ২৬ অগাস্ট পালিত হবে কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী। মথুরায় কংসের কারাগারে জন্ম হয় দেবকী ও বসুদেবের অষ্টম গর্ভের সন্তান কৃষ্ণের। কংসের হাত থেকে তাঁকে রক্ষা করতে প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টির রাতে যমুনা পেরিয়ে বৃন্দাবনে যশোদা ও নন্দের সংসারে কৃষ্ণকে রেখে আসেন বসুদেব।

সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমীতিথিতে যখন রোহিণী নক্ষত্রের প্রাধান্য হয়, তখন জন্মাষ্টমী পালিত হয়। উৎসবটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে, প্রতি বছর মধ্য-আগস্ট থেকে মধ্য-সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনো এক সময়ে পড়ে। কৃষ্ণের জীবনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড (গান বা কীর্তন, গীতিনাট্য, নাট্য, যাত্রা ইত্যাদি) এর মাধ্যমে রাসলীলা, কংস বধ ইত্যাদি কর্মকাণ্ড উপস্থাপন করা হয়। মথুরা, বৃন্দাবন, মণিপুর ইত্যাদি স্থানে এই অনুষ্ঠান অত্যন্ত আড়ম্বরের সাথে করা হয়।লীলায় কৃষ্ণের ছোট বয়সের কর্ম-কাণ্ড দেখানো হয়, অন্যদিকে, দহি হাণ্ডি প্রথায় কৃষ্ণের দুষ্টু স্বভাব প্রতিফলিত করা হয় যেখানে কয়েকজন শিশু মিলে উচ্চস্থানে বেঁধে রাখা মাখনের হাড়ি ভাঙতে চেষ্টা করে। এই পরম্পরাকে তামিলনাডুতে উরিয়াদি নামে পালন করা হয়। কৃষ্ণের জন্ম হাওয়ায় নন্দের সকলকে উপহার বিতরণের কাহিনী উদ্‌যাপন করতে কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর পর বহু স্থানে নন্দোৎসব পালন করা হয়।

স্বয়ং বিষ্ণু কারাগৃহে উপস্থিত হয়ে দেবকী ও বাসুদেবকে দর্শন দেন এবং তাঁদের পূর্বজন্মের তপস্যা সম্পর্কে জানান। তার পুণ্যফলের জন্যই দেবকী ও বাসুদেবের কাছে তিন বার অবতার নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বিষ্ণু দেবকীকে জানান যে, প্রথম জন্মে বৃষ্ণীগর্ভ নামক এক পুত্র হয়। দ্বিতীয় জন্মে দেবকী যখন দেবমাতা অদিতি ছিলেন, তখন বিষ্ণু ছিলেন, তার পুত্র উপেন্দ্র, এবং তিনিই বামন অবতারে রাজা বলিকে উদ্ধার করেন। এবার তৃতীয় জন্মে দেবকীর পুত্র কৃষ্ণ হিসেবে জন্মগ্রহণ করে তাঁর প্রতিশ্রুতি পুরো করেন বিষ্ণু।

শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন দেবকি ও বাসুদেব এর সন্তান এবং হিন্দু ধর্মাম্বলীরা তার জন্মদিন জন্মাষ্টমী হিসেবে পালন করে। শ্রীকৃষ্ণের জন্মের সময় চারিদিকে অরাজকতা, নিপীড়ন, অত্যাচার চরম পর্যায়ে ছিল। সেই সময় মানুষের স্বাধীনতা বলে কিছু ছিল না। সর্বত্র ছিল অশুভ শক্তির বিস্তার। শ্রীকৃষ্ণের মামা কংস ছিলেন তার জীবনের শত্রু। মথুরাতে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের সাথে সাথে সেই রাতে তার বাবা বাসুদেব তাঁকে যমুনা নদী (River Jamuna) পার করে গোকুলে পালক মাতা পিতা যশোদা ও নন্দর কাছে রেখে আসেন।

গোটা বিশ্বজুড়েই কৃষ্ণভক্তেরা এই দিনটি সাড়ম্বরে পালন করেন। পুরাণ অনুসারে বিষ্ণুর মানব অবতারের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী ছিলেন কৃ্ষ্ণ। শ্রীকৃষ্ণের জীবনকথা নিয়ে বহু কাহিনি, উপ-কাহিনি, লোককথা প্রচলিত আছে। জন্মের পর থেকেই কৃষ্ণকে ভগবান হিসেবে পুজো করা শুরু হয়ে যায়।

ভগবদ গীতায় (Gita) কৃষ্ণ বলেছেন, ‘যখনই অসত্য ও পাপে এই পৃথিবী ভরে যাবে, তখনই ধর্ম রক্ষা করতে ও সত্য প্রতিষ্ঠা করতে আমি এই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হব।’ জন্মষ্টমী হল অশুভকে বিনাশ করে শুভ শক্তিকে প্রতিষ্ঠা করার উত্‍সব। বিশ্বাস ও একতা ধরে রাখতে উত্‍সাহ দেয় এই উত্‍সব।

হিন্দু ধর্মাবলম্বী বিশেষত বৈষ্ণবদের কাছে জন্মাষ্টমী একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই উৎসব নানা ভাবে উদ্‌যাপন করা হয়। যেমন – ভগবত পুরাণ অনুযায়ী নৃত্য, নাটক যাকে বলা হয় রাসলীলা বা কৃষ্ণ লীলা, মধ্যরাত্রি তে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের মুহূর্তে ধর্মীয় গীত গাওয়া, উপবাস, দহি হান্ডি প্রভৃতি। রাসলীলা তে মূলত শ্রীকৃষ্ণের ছোটবেলার বিভিন্ন ঘটনা দেখানো হয়।অন্যদিকে দহি হান্ডি প্রথায় অনেক উঁচুতে মাখনের হাড়ি রাখা হয় এবং অনেক ছেলে মিলে মানুষের পিরামিড তৈরি করে সেই হাড়ি ভাঙ্গার চেষ্টা করে। তামিলনাড়ুতে এ প্রথা উড়িয়াদি নামে পরিচিত। এই দিন মানুষ কৃষ্ণের প্রতি ভালোবাসা ব্যক্ত করার জন্য অভুক্ত থাকে, ধর্মীয় গান গায় এবং উপবাস পালন করে।

 শ্রীকৃষ্ণের জন্ম তিথিতে মধ্যরাতে তার ছোট ছোট মূর্তি কে স্নান করিয়ে কাপড় দিয়ে মোছা হয় এবং দোলনায় সাজানো হয়। তারপর উপাসক মন্ডলী নিজেদের মধ্যে খাদ্য ও মিষ্টান্ন বিনিময় করে উপবাস ভঙ্গ করে। গৃহস্ত মহিলারা বাড়ির বিভিন্ন দরজার বাইরে, রান্নাঘরে শ্রী কৃষ্ণের পদচিহ্ন এঁকে দেন যা শ্রীকৃষ্ণের যাত্রা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

জন্মাষ্টমী ভোগ- জন্মাষ্টমীর দিনে একাধিক ভোগ অর্পণ করা হয়ে থাকে দেবতা শ্রীকৃষ্ণকে (Sri Krishna)। এইদিনে বাড়িতে যে লাড্ডু গোপাল রয়েছে, তাঁর উদ্দেশে দেওয়া হয় ভোগ। এমন দিনে ৫৬ ভোগের গুরুত্ব বেশি। ভাদ্র মাসের তিথিতে জন্মাষ্টমী পালিত হয়। ভাদ্র মাসের তাল দিয়ে তৈরি তালের বড়া, তালের ক্ষীর এমন শুভ দিনে দেবতাকে দেওয়া হয়। এছাড়াও নাড়ু থেকে শুরু করে লুচি পায়েস সহ নানান পদ অর্পণ করা হয় গোপাল দেবকে। 

জন্মাষ্টমীতে শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে শশা নিবেদন করার প্রথা রয়েছে। মনে করা হয় শশা পেলে অত্যন্ত প্রীত হন নন্দলাল। যে ভক্ত তাঁকে শশা নিবেদন করেন তাঁর যাবতীয় দুঃখ কষ্ট তিনি মোচন করেন বলে প্রচলিত বিশ্বাস। জন্মাষ্টমীতে ঠিক রাত ১২টায় কৃষ্ণের জন্মক্ষণে শশা কাটতে হয়। এটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মায়ের থেকে নাড়ি গ্রন্থি কাটার রূপক বলে মনে করা হয়।

শ্রীকৃষ্ণের (Shree Krishna) জন্মদিন অর্থাৎ জন্মাষ্টমী (Janmashtami) পালিত হয় সারা দেশজুড়ে। শাস্ত্রমতে, ভাদ্রমাসের কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথিতে ও রোহিণী নক্ষত্রে জন্ম হয়েছিল শ্রীবিষ্ণুর অষ্টম অবতার শ্রী কৃষ্ণের। সেই থেকেই জন্মাষ্টমী পালন করার প্রথা চলে এসেছে। এবছর ১৮ অগাস্ট সারা দেশজুড়েই পালিত হবে জন্মাষ্টমী (Janmasthami 2024)। অনেক প্রদেশে এই দিনে ‘দহি হান্ডি’ও পালন করা হয়। উত্তরভারতের একাধিক এলাকায় ছোট্ট কৃষ্ণ (Krishna) মাখন চুরি করে খেত বলে এই দিনটিকে বিশেষ নাম দিয়ে পালন করা হয়। 

                                                               

এ বছর জন্মাষ্টমীর তিথি- জন্মাষ্টমীর তিথি ২৬ আগস্ট দুপুর ৩ টে ৩৯ মিনিটে শুরু হচ্ছে। আর সেই তিথি শেষ হবে ২৭ আগস্ট দুপুর ২ টো ১৯ মিনিটে। রোহিনী নক্ষত্র ২৬ আগস্ট দুপুর ৩ টে ৫৫ মিনিটে শুরু হবে। আর ২৭ আগস্ট সন্ধ্যা ৩ টে ৩৮ মিনিটে শেষ হবে। অনেকেই জন্মাষ্টমীর আগের দিন থেকে নিরামিষ আহার করেন। জন্মাষ্টমীর দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উপোস করে থাকেন। হরিনাম জপ, শ্রীকৃষ্ণ লীলা শ্রবণ ও ভগবত গীতা পাঠও করে থাকেন অনেকে। নিয়ম হল- জন্মাষ্টমীর পরের দিন সকালে স্নান করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পারণ মন্ত্র পাঠ করে ব্রত সমাপ্ত করার। 

প্রথমে বলতে হবে, “সর্বায় সর্বেশ্বরায় সর্বপতয়ে সর্বসম্ভবায় গোবিন্দায় নমো নমঃ।” শেষে বলতে হবে, “”ভূতায় ভূতেশ্বরায় ভূতপতয়ে ভূতসম্ভবায় গোবিন্দায় নমো নমঃ।” জন্মাষ্টমী ব্রত পালনের জন্য উপকরণ হিসেবে ফুল, আতপ চাল, ফলের নৈবেদ্য, তুলসীপাতা, দূর্বা, ধূপ, দীপ, পঞ্চগব্য, পঞ্চগুড়ি, পাট, বালি, পঞ্চবর্ণের গুড়ো, মধুপক্ক, আসন-অঙ্গুরী-সহ পুজোর আয়োজন করতে হয়।                           

তবে অনেকে গোপালকে (Gopal) লাড্ডুও ভোগে দেন। তবে অবশ্যই তা সকালে দিতে হবে। রাতের পুজোয় সেক্ষেত্রে নিয়ম হল চিনি মিছরি এবং শুকনো ফল নিবেদন করা। পুরোহিতরা বলে থাকেন, ব্রতভঙ্গের পর নিরামিষ আহার গ্রহণ করতে হয়। এই দিনে কিছু বিশেষ নিয়ম পালন করলে শ্রীকৃষ্ণের কৃপা পাওয়া যায়। এই ব্যবস্থাগুলি জন্মাষ্টমিতে মেনে চললে মিলবে সুফল দূর হবে সমস্যা, এমনটাই বলা হয়ে থাকে।       

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *