সূর্য হিন্দুধর্মের প্রধান সৌর দেবতা। তিনি আদিত্যগণের অন্যতম এবং কশ্যপ ও তাঁর অন্যতমা পত্নী অদিতির পুত্র। কোনও কোনও মতে তিনি ইন্দ্রের পুত্র। সূর্যের কেশ ও বাহুর সোনার। তিনি সপ্তাশ্ববাহিত রথে আকাশপথে পরিভ্রমণ করেন। তাঁর রথের ঘোড়াগুলি সাতটি পৃথক পৃথক রঙের, যা রঙধনুর সাত রঙের প্রতীক। তিনি রবিবারের অধিপতি। হিন্দু ধর্মীয় সাহিত্যে সূর্যকে যথেষ্ট গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। কারণ তিনিই একমাত্র দেবতা যাঁকে মানুষ প্রত্যহ প্রত্যক্ষ করতে পারেন। এছাড়াও, শৈব ও বৈষ্ণবেরা সূর্যকে যথাক্রমে শিব ও বিষ্ণুর রূপভেদ মনে করেন। উদাহরণস্বরূপ, বৈষ্ণবেরা সূর্যকে সূর্যনারায়ণ বলে থাকেন। শৈব ধর্মতত্ত্বে, শিবের অষ্টমূর্তি রূপের অন্যতম হলেন সূর্য।
সূর্য দেবতা প্রধান দেবতা (Surja) । তার হাত উজ্জ্বল বর্ণের । মাথায় উজ্জ্বল মুকুট । সাতটি ঘোড়া চালিত রথে তার অবস্থান । কথিত আছে , সূর্য দেবের রথ কখনো থামে না । সূর্য দেবতা ঋক বেদের বিখ্যাত দেবতা । তার সারথির নাম হল অরুণ । কথিত আছে যে , সূর্য দেবতার রথের চাকা একটি । সমস্ত হিন্দুরা সকালে সূর্যদেবকে জল নিবেদন করেন। গৃহ এবং ঈশ্বর উভয় হিসাবেই পূজিত হন। যিনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন বা বলেন যে তিনি আস্তিক, তিনি সূর্য ঈশ্বরের উপাসনা করেন। সূর্য দেবতার দুই স্ত্রী, সাঙ্গ্যা ও ছায়া। একটি কিংবদন্তি অনুসারে, ভগবান সূর্য তার স্ত্রী সাঙ্গ্যাকে ত্যাগ করেছিলেন, কারণ তিনি সূর্য দেবতার তেজ ও দৃঢ়তা সহ্য করতে পারেননি। আর এই ঘটনার পর সূর্যদেবের রশ্মির তপস্যা কমে যায়। এই কারণে, সূর্যের স্ত্রী সাঙ্গ্যা অশ্বনী (ঘোড়া) রূপে পৃথ্বীতে বাস করতে শুরু করেন এবং তার আনুগত্য করার জন্য, সূর্যদেবও অশ্ব (ঘোড়া) রূপে পৃথ্বীতে বসবাস শুরু করেন। এবং এই সময়ে তার ২ পুত্রের জন্ম হয়, যাদের আমরা অশ্বিনী কুমার নামে চিনি।
কথিত আছে, ভগবান সূর্য (Surya) অত্যন্ত শক্তিশালী, তাই তিনি তার পুত্র ন্যায়ের দেবতা শনিকেও আক্রমণ করে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। এর পর শনি তিল দিয়ে সূর্য দেবতার আরাধনা করলে পুত্রের ওপর পিতার প্রকোপ শেষ হয়। আমরা সবাই জানি যে প্রাচীনকালে ভারতে সূর্য দেবতার অনেক মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আর এসব মন্দিরের অনেকগুলোই বিশ্ব বিখ্যাত। হিন্দু ধর্মে সূর্য দেবতার ১২টি নাম অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সুখ ও সমৃদ্ধি লাভের জন্য সূর্য দেবতার নাম জপ করুন-
ওম সূর্য নমহা। ওম মিত্রায় নমহা। ওম রাবায়ে নমহা। ওম ভানভে নমহা। ওম খগাই নমহা। ওম পুষনে নমহা। ওম হিরণ্যগর্ভায় নমঃ ওম মারিচে নমহা। ওম আদিত্য নমহা। ওম সাবিত্রে নমহা। ওম আরকে নমহা। ওম ভাস্করায় নমহা।
সুস্বাস্থ্য লাভ করার জন্য এই মন্ত্র জপ করুন। এ ছাড়াও নিজের কাজ করার ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যও সূর্যকে জলের অর্ঘ্য দেওয়ার সময় এই মন্ত্র জপ করতে পারবেন।
২. ওম হৃং রবয়ে নমঃ
ক্ষয় ব্যধির কারণে চিন্তিত থাকলে এবং শরীরের রক্ত চলাচল ব্যবস্থা সুষ্ঠু করতে চাইলে সূর্যের সামনে দাঁড়িয়ে এই মন্ত্র জপ করুন। এই মন্ত্র জপের ফলে কফের সমস্যার দূর হবে।
৩. ওম হূং সূর্যায় নমঃ
মানসিক শান্তির জন্য সূর্য দেবের এই মন্ত্র জপ করবেন। এর প্রভাবে বুদ্ধি বৃদ্ধি হবে।
৪. ওম হ্রাং ভানবে নমঃ
মূত্রাশয়ের সমস্যা সমাধানের জন্য এই মন্ত্র জপ করুন।
৫. ওম হৃোং খগায় নমঃ
মলাশয় সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে এই মন্ত্র জপ করুন। এর ফলে বুদ্ধির বিকাশ হয় ও শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়।
৬. ওম হৃঃ পূষণে নমঃ
শক্তি ও ধৈর্য বৃদ্ধির জন্য এই মন্ত্র জপ করতে পারেন। এর ফলে ব্যক্তি ধর্মীয় কাজে মনোনিবেশ করতে পারে।
৭. ওম হ্রাং হিরণ্যগর্ভায় নমঃ
ছাত্র-ছাত্রীরা এই মন্ত্রের দ্বারা লাভান্বিত হতে পারেন। এই মন্ত্র জপের ফলে শারীরিক, বৌদ্ধি ও মানসিক শক্তি বিকশিত হয়।
৮. ওম মরীচয়ে নমঃ
শাস্ত্র মতে এই মন্ত্র জপ করলে ব্যক্তি সুস্থ শরীর লাভ করতে পারে। ব্যক্তি নিরোগী থাকে।
৯. ওম আদিত্যায় নমঃ
আর্থিক সমস্যা দূর করতে ও তীব্র বুদ্ধি লাভের জন্য রবিবার এই মন্ত্রটি জপ করতে পারেন।
১০. ওম সবিত্রে নমঃ
এই মন্ত্র জপ করলে ব্যক্তির মান-সম্মান বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি সূর্যের বিশেষ আশীর্বাদ থাকা উচিত। এ ছাড়াও ব্যক্তির কল্পনাশক্তি বৃদ্ধি পায়।
ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠা আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্য়ন্ত উপকারী। বাড়ির প্রবীণরা অনেক সময় আমাদের ব্রাহ্ম মুহূর্তে বিছানা ছাড়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অনেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠে, স্নান সেরে, সূর্য দেবতাকে জলের অর্ঘ্য নিবেদন করেন। সূর্যদেব হলেন জ্যোতি, বুদ্ধি, সম্পদ ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক।
প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে যে ব্যক্তি সকালে ঘুম থেকে ওঠেন এবং সূর্যকে জলের অর্ঘ্য দিয়ে থাকেন, তিনি জীবনে উচ্চস্থান অর্জন করেন। সম্পদ, খ্যাতি ও প্রতিপত্তির শীর্ষে উঠতে পারেন এঁরা। হিন্দু ধর্মে প্রতিদিন সূর্যের পুজো করার রীতি প্রচলিত আছে। কিন্তু জানেন কি, ঠিক কোন সময়ে সূর্য দেবতাকে জলের অর্ঘ্য নিবেদন করলে সর্বাধিক লাভ পাওয়া যায়? এই বিষয়টিই আজ আমরকা বিস্তারিত জেনে নেব।
সূর্য দেবতাকে জলের অর্ঘ্য নিবেদন করার সময়
শাস্ত্র অনুসারে সূর্যকে জলের অর্ঘ্য দেওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হল সূর্যোদয়ের ঠিক এক ঘণ্টা পরে। স্থান ও ঋতু ভিত্তিতে এই সময়টা এগিয়ে পিছিয়ে যাবে। তবে মোটামুটি ভাবে সকালে ৬টা ১৫ মিনিট থেকে ৬টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে সূর্যকে জল নিবেদন করতে পারেন। প্রতিদিন সূর্যকে জল নিবেদন করা সম্ভব না হলে অন্তত প্রতি রবিবার এই কাজ অবশ্যই করুন।
জলের অর্ঘ্য দেওয়ার পদ্ধতি
সকালে সূর্য দেবতাকে জলের অর্ঘ্য নিবেদন করতে তামার পাত্র ব্যবহার করুন। জলের মধ্যে কুমকুম, ফুল ও অক্ষত মিশিয়ে দিন। তারপর ‘ওম হ্রান হ্রীন হ্রোন স্বাহা সূর্যায় নমহঃ’ মন্ত্র জপ করতে করতে সূর্যকে জলের অর্ঘ্য দিন। এই সময় আপনার মুখ যেন অবশ্যই পূর্ব দিকে থাকে। মনে রাখবেন জলের অর্ঘ্য দেওয়ার সময় হাতের পাত্রটা অন্তত আট ইঞ্চি উপরে তুলে ধরে রাখতে হবে, যাতে জল যখন পড়বে, তখন সূর্যের আলো আপনার শরীরে এসে লাগে।
Collected