প্রতি মাসের শুক্লপক্ষের শেষ দিনে পূর্ণিমা উৎসব পালিত হয়। বিশ্বাস করা হয় যে পূর্ণিমার দিনে উপবাস ও প্রার্থনা করলে জীবনের সমস্ত উদ্বেগ দূর হয়। হিন্দু ধর্মে পূর্ণিমা তিথির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। আসুন জেনে নিই এই দিনের মাহাত্ম্য।
প্রতি মাসের শুক্লপক্ষের শেষ তিথিতে পূর্ণিমা উৎসব পালিত হয়। বিশ্বাস করা হয় যে পূর্ণিমার দিনে উপবাস ও প্রার্থনা করলে জীবনের সমস্ত উদ্বেগ দূর হয়। হিন্দু ধর্মে পূর্ণিমা তিথির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। পূর্ণিমা তিথি বলিষ্ঠ এবং সৌম্য তিথি নামেও পরিচিত, এই দিনে চন্দ্র পূর্ণ প্রভাবে থাকে, তাই এই দিনটিকে ফুল মুনও বলা হয়। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, পূর্ণিমা উপবাস, পুজো, ধ্যান এবং দানের জন্য অত্যন্ত শুভ বলে বিবেচিত হয়।
মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা তিথি শুরু – ১১ ফেব্রুয়ারি, সন্ধ্যা ৬ টা ৫৬ মিনিট থেকে। মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা তিথি শেষ হবে – ১২ ফেব্রুয়ারি, সন্ধ্যা ৭ টা ২২ মিনিটে।
মহাকুম্ভের সময় মাঘ পূর্ণমা ২০২৫:-
১৪৪ বছর পর মহাকুম্ভের (mahakumbh2025) পূণ্য তিথির মাঝে পড়ছে মাঘ পূর্ণিমা। এই মাঘ পূর্ণিমায় স্নান ও দানের মাহাত্ম্য রয়েছে। অনেকেই এই বিশেষ পূর্ণিমায় শুভ কাজ করে থাকেন। অনেকের বাড়িতেই এই সময় সত্যনারায়ণের পুজো হয়। মহাকুম্ভে পূণ্যস্নানের অন্যতম দিন এই মাঘ পূর্ণিমা। এই মাঘ পূর্ণিমা তিথি সেই দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেখা যাক, মাঘ পূর্ণিমা তিথি ২০২৫ সালে কবে পড়ছে?
মাঘ পূর্ণিমা ২০২৫ তিথি:-
২০২৫ সালে মাঘ পূর্ণিমা তিথি ১১ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে। তবে শাস্ত্রমতে বলা হচ্ছে, উদয়া তিথি অনুসারে মাঘ পূর্ণিমা ১২ ফেব্রুয়ারি পালিত হবে। ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ পড়ছে মঙ্গলবার। সেদিন সন্ধ্যা ৬ টা ৫৫ মিনিটে এই তিথি শুরু হচ্ছে। আর তিথি শেষ হবে ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ অর্থাৎ বুধবার। সেই দিন সন্ধ্যা ৭ টা ২২ মিনিটে তিথি শেষ হবে। উদয়া তিথি অনুসারে ১২ ফেব্রুয়ারি মাঘ পূর্ণিমা পালিত হবে।
মাঘ পূর্ণিমায় স্নানের তিথি:
এ বছর মহাকুম্ভের (Kumbh) চতুর্থ অমৃত স্নানও হতে চলেছে মাঘ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে। অমৃতস্নান গ্রহণের শুভ সময় ১২ই ফেব্রুয়ারি ভোর ০৫:১৯ মিনিটে থেকে শুরু হবে এবং ভোর ০৬:১০ মিনিট পর্যন্ত চলবে। এই সময়ে গঙ্গায় স্নান করে ভগবান বিষ্ণু বা ভগবান ভোলেনাথের আরাধনা করলে আপনার জীবন সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরে যাবে। এর সাথে বিজয় মুহুর্ত হবে দুপুর ০২:২৭ থেকে ০৩:১১ পর্যন্ত।
যদি আমরা পূর্ণিমা (purnima) তিথির বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব সম্পর্কে কথা বলি, তাহলে সেই অনুসারে, এই সময়ে সূর্য ও চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি বেশি থাকে, যার কারণে সমুদ্রে জোয়ার তৈরি হয়। আয়ুর্বেদেও পূর্ণিমার দিনটিকে বিশেষ বিবেচনা করা হয়। এই সময়টি মন, শরীর এবং আত্মার ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সবচেয়ে ভালো বলে মনে করা হয়।
ধর্মীয় গ্রন্থে মাঘ মাসের পূর্ণিমার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এই দিনে গঙ্গা, যমুনা এবং সরস্বতী নদীর সঙ্গমস্থল প্রয়াগে স্নান করলে ভক্তদের শুভ ফল লাভ হয়। এছাড়াও, এই বিশেষ দিনে, অভাবী মানুষদের দান করার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই দিনে পুজো করেও একজন ব্যক্তি বিশেষ উপকার পেতে পারেন।
পূর্ণিমার দিন উপবাস রাখা উচিত এবং ভগবান বিষ্ণু এবং মা লক্ষ্মীর পুজো করা উচিত। এটি করলে আপনার জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসবে। এই দিনটি ধ্যান এবং আধ্যাত্মিক অনুশীলনের জন্য খুবই শুভ বলে বিবেচিত হয়। মানসিক শান্তি এবং ইতিবাচক শক্তি অর্জনের জন্য এটি সেরা সময়। দরিদ্রদের খাদ্য, বস্ত্র এবং অর্থ দান করলে পুণ্য লাভ হয়। এই দিনে খাদ্য ও জল দানের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।
মাঘ পূর্ণিমায় সূর্যোদয়ের আগে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠুন। তারপর নদীর পবিত্র জলে স্নান করা উচিত। যদি এটি সম্ভব না হয় তবে আপনি গঙ্গা জল স্নানের জলে মিশিয়ে বাড়িতে স্নান করতে পারেন। এরপর, সূর্য মন্ত্র জপ করে সূর্য দেবতাকে জল নিবেদন করা হয় এবং উপবাসের সংকল্প নেওয়া হয়। এই দিনে ভগবান মধুসূদনের পুজো করার একটি ঐতিহ্য রয়েছে। পুজোর পর, দরিদ্র ও ব্রাহ্মণদের খাবার দিন এবং তাদের সাহায্য করুন। এইভাবে ভগবান বিষ্ণুর আশীর্বাদ লাভ হয়।